মথি লিখিত সুসমাচার।
Chapter 1
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা।
1 যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা তিনি দায়ূদের সন্তান অব্রাহামের সন্তান 2 অব্রাহামের ছেলে ইসহাক ইসহাকের ছেলে যাকোব যাকোবের ছেলে যিহূদা ও তাঁর ভাইয়েরা 3 যিহূদার ছেলে পেরস ও সেরহ তামরের গর্ভের সন্তান পেরসের ছেলে হিস্রণ হিস্রোনের ছেলে রাম 4 রামের ছেলে অম্মীনাদব অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন নহশোনের ছেলে সলমোন 5 সলমোনের ছেলে বোয়স রাহবের গর্ভের সন্তান বোয়সের ছেলে ওবেদ রুতের গর্ভের ছেলে ওবেদের ছেলে যিশয় 6 যিশয়ের ছেলে দায়ূদ রাজা দায়ূদের ছেলে শলোমন ঊরিয়ের বিধবার গর্ভের সন্তান 7 শলোমনের ছেলে রহবিয়াম রহবিয়ামের ছেলে অবিয় অবিয়ের ছেলে আসা 8 আসার ছেলে যিহোশাফট যিহোশাফটের ছেলে যোরাম যোরামের ছেলে উষিয় 9 উষিয়ের ছেলে যোথাম যোথামের ছেলে আহস আহসের ছেলে হিস্কিয় 10 হিস্কিয়ের ছেলে মনংশি মনংশি ছেলে আমোন আমোনের ছেলে যোশিয় 11 যোশিয়ের সন্তান যিকনিয় ও তাঁর ভাইয়েরা ব্যাবিলনে নির্ব্বাসনের সময়ে এদের জন্ম হয় 12 যিকনিয়ের ছেলে শলটীয়েল ব্যাবিলনে নির্ব্বাসনের পরে জাত শলটীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল 13 সরুব্বাবিলের ছেলে অবীহূদ অবীহূদের ছেলে ইলীয়াকীম ইলীয়াকীমের ছেলে আসোর 14 আসোরের ছেলে সাদোক সাদোকের ছেলে আখীম আখীমের ছেলে ইলীহূদ 15 ইলীহূদের ছেলে ইলীয়াসর ইলীয়াসরের ছেলে মত্তন মত্তনের ছেলে যাকোব 16 যাকোবের ছেলে যোষেফ ইনি মরিয়মের স্বামী এই মরিয়মের গর্ভে যীশুর জন্ম হয় যাকে খ্রীষ্ট অভিষিক্ত বলে 17 এইভাবে অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত সবমিলিয়ে চোদ্দ পুরুষ এবং দাউদ থেকে বাবিলে নির্ব্বাসন থেকে খ্রীষ্ট পর্যন্ত চোদ্দ পুরুষ 18 যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এইভাবে হয়েছিল যখন তাঁর মা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগদত্তা হলে তাঁদের সহবাসের আগে জানা গেল তিনি গর্ভবতী হয়েছেন পবিত্র আত্মার মাধ্যমে 19 আর তাঁর স্বামী যোষেফ ধার্মিক হওয়াতে তিনি চাননি যে জনসাধারণের কাছে তাঁর স্ত্রীর নিন্দা হয় তাই তাঁকে গোপনে ছেড়ে দেবেন বলে ঠিক করলেন 20 তিনি এই সব ভাবছেন এমন সময় দেখ প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন যোষেফ দায়ূদসন্তান তোমার স্ত্রী মরিয়মকে গ্রহণ করতে ভয় করো না কারণ তাঁর গর্ভে যা জন্মেছে তা পবিত্র আত্মা থেকে হয়েছে আর তিনি ছেলের জন্ম দেবেন 21 এবং তুমি তাঁর নাম যীশু উদ্ধারকর্তা রাখবে কারণ তিনিই নিজের প্রজাদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন 22 এই সব ঘটল যেন ভাববাদীর মাধ্যমে বলা প্রভুর এই কথা পূর্ণ হয় 23 দেখ সেই কুমারী গর্ভবতী হবে এবং একটি ছেলের জন্ম দেবে আর তাঁর নাম রাখা যাবে ইম্মানুয়েল অনুবাদ করলে এর অর্থ আমাদের সাথে ঈশ্বর 24 পরে যোষেফ ঘুম থেকে উঠে প্রভুর দূত তাঁকে যেরকম আদেশ করেছিলেন সেরকম করলেন 25 নিজের স্ত্রীকে গ্রহণ করলেন আর যে পর্যন্ত ইনি ছেলে জন্ম না দিলেন সেই পর্যন্ত যোষেফ তাঁর পরিচয় নিলেন না আর তিনি ছেলের নাম যীশু রাখলেন
Chapter 2
প্রভু যীশুর শৈশবকালের বিবরণ।
1 হেরোদ রাজার সময়ে যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হলে পর দেখ পূর্ব্বদেশ থেকে কয়েক জন পণ্ডিত 2 যিরুশালেমে এসে বললেন ইহূদিদের যে রাজা জন্মেছেন তিনি কোথায় কারণ আমরা পূর্ব্বদেশে তাঁর তারা দেখেছি ও তাঁকে প্রণাম করতে এসেছি 3 এই কথা শুনে হেরোদ রাজা অস্থির হলেন ও তাঁর সাথে সমস্ত যিরুশালেমও অস্থির হল 4 আর তিনি সমস্ত প্রধান যাজক ও লোক সাধারণের শিক্ষা গুরুদেরকে একসাথে করে তাদের জিজ্ঞাসা করলেন খ্রীষ্ট কোথায় জন্মাবেন 5 তারা তাঁকে বললেন যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে কারণ ভাববাদীর মাধ্যমে এইভাবে লেখা হয়েছে 6 আর তুমি হে যিহূদা দেশের বৈৎলেহম তুমি যিহূদার শাসনকর্তাদের মধ্যে কোন মতে একেবারে ছোট নও কারণ তোমার থেকে সেই অধ্যক্ষ উৎপন্ন হবেন যিনি আমার প্রজা ইস্রায়েলকে পালন করবেন 7 তখন হেরোদ সেই পণ্ডিতদের গোপনে ডেকে ঐ তারা কোন সময়ে দেখা গিয়েছিল তা তাঁদের কাছে বিশেষভাবে জেনে নিলেন 8 পরে তিনি তাদের বৈৎলেহমে পাঠিয়ে দিয়ে বললেন তোমরা গিয়ে বিশেষভাবে সেই শিশুর খোঁজ কর দেখা পেলে আমাকে খবর দিও যেন আমিও গিয়ে তাঁকে প্রণাম করতে পারি 9 রাজার কথা শুনে তাঁরা চলে গেলেন আর দেখ পূর্ব্বদেশে তাঁরা যে তারা দেখেছিলেন তা তাদের আগে আগে চলল শেষে যেখানে শিশুটি ছিলেন তাঁর উপরে এসে থেমে গেল 10 তারাটি দেখতে পেয়ে তারা মহানন্দে খুব উল্লাসিত হলেন 11 পরে তাঁরা ঘরের মধ্যে গিয়ে শিশুটিকে তাঁর মা মরিয়মের সাথে দেখতে পেলেন ও উপুড় হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন এবং নিজেদের বাক্স খুলে তাঁকে সোনা ধুনো ও গন্ধরস উপহার দিলেন 12 পরে তাঁরা যেন হেরোদের কাছে ফিরে না যান স্বপ্নে এই আদেশ পেয়ে অন্য পথ দিয়ে নিজেদের দেশে চলে গেলেন 13 তাঁরা চলে গেলে পর দেখ প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোষেফকে দর্শন দিয়ে বললেন ওঠ শিশুটিকে ও তাঁর মাকে নিয়ে মিশরে পালিয়ে যাও আর আমি যত দিন তোমাকে না বলি ততদিন সেখানে থাক কারণ হেরোদ শিশুটিকে হত্যা করার জন্য তাঁর খোঁজ করবে 14 তখন যোষেফ উঠে রাত্রিবেলায় শিশুটিকে ও তাঁর মাকে নিয়ে মিশরে চলে গেলেন 15 এবং হেরোদের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে থাকলেন যেন ভাববাদীর মাধ্যমে বলা প্রভুর এই কথা পূর্ণ হয় আমি মিশর থেকে নিজের ছেলেকে ডেকে আনলাম 16 পরে হেরোদ যখন দেখলেন যে তিনি পণ্ডিতদের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন তখন খুব রেগে গেলেন এবং সেই পণ্ডিতদের কাছে বিশেষভাবে যে সময় জেনে নিয়েছিলেন সেই অনুসারে দুবছর ও তার অল্প বয়সের যত বালক বৈৎলেহম ও তার সমস্ত পরিসীমার মধ্যে ছিল লোক পাঠিয়ে তিনি সবাইকে হত্যা করালেন 17 তখন যিরমিয় ভাববাদী মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হল 18 রামায় শব্দ শোনা যাচ্ছে হাহাকার ও খুব কান্নাকাটি রাহেল নিজের সন্তানদের জন্য কান্নাকাটি করছেন সান্ত্বনা পেতে চান না কারণ তারা নেই 19 হেরোদের মৃত্যু হলে পর দেখ প্রভুর এক দূত মিশরে যোষেফকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বললেন 20 ওঠ শিশুটিকে ও তাঁর মাকে নিয়ে ইস্রায়েল দেশে যাও কারণ যারা শিশুটিকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল তারা মারা গিয়েছে 21 তাতে তিনি উঠে শিশুটিকে ও তাঁর মাকে নিয়ে ইস্রায়েল দেশে এলেন 22 কিন্তু যখন তিনি শুনতে পেলেন যে আর্খিলায়ের বাবা হেরোদের পদে যিহূদিয়াতে রাজত্ব করছেন তখন সেখান যেতে ভয় পেলেন পরে স্বপ্নে আদেশ পেয়ে গালীল প্রদেশে চলে গেলেন 23 এবং নাসরৎ নামে শহরে গিয়ে বসবাস করলেন যেন ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হয় যে তিনি নাসরতীয় বলে পরিচিত হবেন
Chapter 3
যোহন বাপ্তাইজকের প্রচার কাজ।
1 সেই সময়ে যোহন বাপ্তিষ্মদাতা উপস্থিত হয়ে যিহূদিয়ার প্রান্তরে প্রচার করতে লাগলেন 2 তিনি বললেন মন ফেরাও কারণ স্বর্গরাজ্য নিকটে 3 ইনিই সেই ব্যক্তি যাঁর বিষয়ে যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে এই কথা বলা হয়েছিল মরূপ্রান্তরে একজনের কন্ঠস্বর সে ঘোষণা করছে তোমরা প্রভুর পথ তৈরী কর তাঁর রাজপথ সোজা কর 4 যোহন উটের লোমের কাপড় পরতেন তাঁর কোমরে চামড়ার বেল্ট ও তাঁর খাবার পঙ্গপাল ও বনমধু ছিল 5 তখন যিরুশালেম সমস্ত যিহূদিয়া এবং যর্দনের কাছাকাছি সমস্ত অঞ্চলের লোক বের হয়ে তাঁর কাছে যেতে লাগল 6 আর নিজের নিজের পাপ স্বীকার করে যর্দন নদীতে তাঁর মাধ্যমে বাপ্তাইজিত হতে লাগল 7 কিন্তু অনেক ফরীশী ও সদ্দূকী বাপ্তিষ্মের জন্য আসছে দেখে তিনি তাদের বললেন হে বিষাক্ত সাপেদের বংশেরা আগামী কোপ থেকে পালাতে তোমাদের কে চেতনা দিল 8 অতএব মন পরিবর্তনের যোগ্য ফলে ফলবান হও 9 আর ভেবো না যে তোমরা মনে মনে বলতে পার অব্রাহাম আমাদের পিতা কারণ আমি তোমাদের বলছি ঈশ্বর এই সব পাথর থেকে অব্রাহামের জন্য সন্তান তৈরী করতে পারেন 10 আর এখনই গাছ গুলির শিকড়ে কুড়াল লাগান আছে অতএব যে কোন গাছে ভালো ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া যায় 11 আমি তোমাদের মন পরিবর্তনের জন্য জলে বাপ্তিষ্ম দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমার পরে যিনি আসছেন তিনি আমার থেকে শক্তিমান আমি তাঁর জুতো বহন করারও যোগ্য নই তিনি তোমাদের পবিত্র আত্মা ও আগুনে বাপ্তিষ্ম দেবেন 12 তাঁর কুলা তাঁর হাতে আছে আর তিনি নিজের খামার পরিষ্কার করবেন এবং নিজের গম গোলায় সংগ্রহ করবেন কিন্তু যে আগুন কখন নেভেনা সেই আগুনে তুষ পুড়িয়ে দেবেন 13 সেই সময়ে যীশু যোহনের মাধ্যমে বাপ্তিষ্ম নেবার জন্য গালীল থেকে যর্দনে তাঁর কাছে এলেন 14 কিন্তু যোহন তাঁকে বারণ করতে লাগলেন বললেন আপনার মাধ্যমে আমারই বাপ্তিষ্ম নেওয়া দরকার আর আপনি আমার কাছে আসছেন 15 কিন্তু যীশু উত্তর করে তাঁকে বললেন এখন রাজি হও কারণ এইভাবে সমস্ত ধার্মিকতা পরিপূর্ণ করা আমাদের উচিত তখন তিনি তাঁর কথায় রাজি হলেন 16 পরে যীশু বাপ্তিষ্ম নিয়ে অমনি জল থেকে উঠলেন আর দেখ তাঁর জন্য স্বর্গ খুলে গেল এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে পায়রার মত নেমে নিজের উপরে আসতে দেখলেন 17 আর দেখ স্বর্গ থেকে এই বাণী হল ইনিই আমার প্রিয় পুত্র এতেই আমি সন্তুষ্ট
Chapter 4
এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
1 তখন যীশু শয়তানের মাধ্যমে পরীক্ষিত হবার জন্য পবিত্র আত্মার মাধ্যমে মরূপ্রান্তে এলেন 2 আর তিনি চল্লিশ দিনরাত উপবাস থেকে শেষে ক্ষুধিত হলেন 3 তখন পরীক্ষক কাছে এসে তাঁকে বললেন তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে বল যেন এই পাথরগুলো রুটি হয়ে যায় 4 কিন্তু তিনি উত্তর করে বললেন লেখা আছে মানুষ শুধুমাত্র রুটিতে বাঁচবে না কিন্তু ঈশ্বরের মুখ থেকে যে প্রত্যেক কথা বের হয় তাতেই বাঁচবে 5 তখন শয়তান তাঁকে পবিত্র শহরে নিয়ে গেল এবং ঈশ্বরের মন্দিরের চূড়ার উপরে দাঁড় করাল 6 আর তাকে বলল তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে নীচে ঝাঁপ দিয়ে পড় কারণ লেখা আছে তিনি নিজের দূতদের তোমার বিষয়ে আদেশ দেবেন আর তাঁরা তোমাকে হাতে করে তুলে নেবেন যদি তোমার পায়ে পাথরের আঘাত লাগে 7 যীশু তাকে বললেন আবার এও লেখা আছে তুমি নিজের ঈশ্বর প্রভুর পরীক্ষা করো না 8 আবার শয়তান তাঁকে অনেক উঁচু এক পর্বতে নিয়ে গেল এবং পৃথিবীর সব রাজ্য ও সেই সবের ঐশ্বর্য্য দেখাল 9 আর তাঁকে বলল তুমি যদি উপুড় হয়ে আমাকে প্রণাম কর এই সবই আমি তোমাকে দেব 10 তখন যীশু তাকে বললেন দূর হও শয়তান কারণ লেখা আছে তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই প্রণাম করবে কেবল তাঁরই আরাধনা করবে 11 তখন শয়তান তাঁকে ছেড়ে চলে গেল আর দেখ দূতেরা কাছে এসে তাঁর সেবা করতে লাগলেন 12 পরে যোহন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন শুনে তিনি গালীলে চলে গেলেন 13 আর নাসরৎ ছেড়ে সমুদ্রতীরে সবূলূন ও নপ্তালির অঞ্চলে অবস্থিত কফরনাহূমে গিয়ে বাস করলেন 14 যেন যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হয় 15 সবূলূন দেশ ও নপ্তালি দেশ সমুদ্রের পথে যর্দনের অন্য পারে অযিহুদীদের গালীল 16 যে জাতি অন্ধকারে বসেছিল তারা মহা আলো দেখতে পেল যারা মৃত্যুর দেশে ও ছায়াতে বসেছিল তাদের উপরে আলোর উদয় হল 17 সেই থেকে যীশু প্রচার করতে শুরু করলেন বলতে লাগলেন মন পরিবর্তন কর কারণ স্বর্গরাজ্য কাছাকাছি হল 18 একসময় যীশু গালীল সমুদ্রের তীর দিয়ে বেড়াতে বেড়াতে দেখলেন দুই ভাই শিমোন যাকে পিতর বলে ও তার ভাই আন্দ্রিয় সমুদ্রে জাল ফেলছেন কারণ তাঁরা জেলে ছিলেন 19 তিনি তাঁদের বললেন আমার সঙ্গে এস আমি তোমাদের মানুষ ধরা শেখাব 20 আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা জাল ফেলে দিয়ে তাঁর সঙ্গে গেলেন 21 পরে তিনি সেখান থেকে আগে গিয়ে দেখলেন আর দুই ভাই সিবদিয়ের পুত্র যাকোব ও তাঁর ভাই যোহন নিজেদের বাবা সিবদিয়ের সাথে নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন তিনি তাঁদের ডাকলেন 22 আর তখনই তাঁরা নৌকা ও নিজেদের বাবাকে পরিত্যাগ করে তাঁর অনুসরণ করলেন 23 পরে যীশু সমস্ত গালীলে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তিনি লোকদের সমাজঘরে সমাজঘরে শিক্ষা দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করলেন এবং লোকদের সব রকম রোগ ও সব রকম অসুখ ভালো করলেন 24 আর তাঁর কথা সমস্ত সুরিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল এবং নানা প্রকার রোগ ও ব্যাধিতে হয়েছে এমন সমস্ত অসুস্থ লোক ভূতগ্রস্ত মৃগীরোগী ও পক্ষাঘাতী লোক সবাই তাঁর কাছে এলো আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন 25 আর গালীল থেকে দিকাপলি যিরুশালেম যিহূদিয়া ও যর্দনের অন্য পাড় থেকে প্রচুর লোক তাঁকে অনুসরণ করল
Chapter 5
প্রভু যীশুর পর্বতে উপদেশ দেওয়া।
1 তিনি প্রচুর লোক দেখে পাহাড়ে উঠলেন আর তিনি বসার পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে এলেন 2 তখন তিনি মুখ খুলে তাদের এই শিক্ষা দিতে লাগলেন 3 ধন্য যারা আত্মাতে গরিব কারণ স্বর্গ রাজ্য তাদেরই 4 ধন্য যারা দুঃখ করে কারণ তারা সান্ত্বনা পাবে 5 ধন্য যারা বিনয়ী কারণ তারা ভূমির অধিকারী হবে 6 ধন্য যারা ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত কারণ তারা পরিতৃপ্ত হবে 7 ধন্য যারা দয়াশীল কারণ তারা দয়া পাবে 8 ধন্য তারা যাদের মন শুদ্ধ কারণ তারা ঈশ্বরের দর্শন পাবে 9 ধন্য যারা মিলন করে দেয় কারণ তারা ঈশ্বরের সন্তান বলে পরিচিত হবে 10 ধন্য যারা ধার্মিকতার জন্য নির্যাতিত হয়েছে কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই 11 ধন্য তোমরা যখন লোকে আমার জন্য তোমাদের নিন্দা ও নির্যাতন করে এবং মিথ্যা করে তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বরকম খারাপ কথা বলে 12 আনন্দ করো খুশি হও কারণ স্বর্গে তোমাদের পুরষ্কার প্রচুর কারণ তোমাদের আগে যে ভাববাদীরা ছিলেন তাদের তারা সেইভাবে নির্যাতন করত 13 তোমরা পৃথিবীর লবণ কিন্তু লবণের স্বাদ যদি যায় তবে তা কিভাবে লবণের গুনবিশিষ্ট করা যাবে তা আর কোনো কাজে লাগে না কেবল বাইরে ফেলে দেবার ও লোকের পায়ের তলায় দলিত হবার যোগ্য হয় 14 তোমরা জগতের আলো পর্বতের উপরে অবস্থিত শহর গোপন থাকতে পারে না 15 আর লোকে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঝুড়ির নীচে রাখে না কিন্তু দীপাধারের উপরেই রাখে তাতে তা ঘরের সব লোককে আলো দেয় 16 সেইভাবে তোমাদের আলো মানুষদের সামনে উজ্জ্বল হোক যেন তারা তোমাদের ভাল কাজ দেখে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার গৌরব করে 17 মনে কর না যে আমি আইন কি ভাববাদীগ্রন্থ ধ্বংস করতে এসেছি আমি ধ্বংস করতে আসিনি কিন্তু সম্পূর্ণ করতে এসেছি 18 কারণ আমি তোমাদের সত্য বলছি যে পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হবে সে পর্যন্ত আইনের এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হবে না সবই সফল হবে 19 অতএব যে কেউ এই সব ছোট আদেশের মধ্যে কোন একটি আদেশ অমান্য করে ও লোকদেরকে সেইভাবে শিক্ষা দেয় তাকে স্বর্গরাজ্যে অতি ছোট বলা যাবে কিন্তু যে কেউ সে সব পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে স্বর্গরাজ্যে মহান বলা যাবে 20 কারণ আমি তোমাদের বলছি ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের থেকে তোমাদের ধার্মিকতা যদি বেশি না হয় তবে তোমরা কোনো মতে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না 21 তোমরা শুনেছ আগের কালের লোকদের কাছে বলা হয়েছিল তুমি নরহত্যা কর না আর যে নরহত্যা করে সে বিচারের দায়ে পড়বে 22 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে কেউ নিজের ভাইয়ের প্রতি রাগ করে সে বিচারের দায়ে পড়বে আর যে কেউ নিজের ভাইকে বলে রে বোকা সে মহাসভার দায়ে পড়বে আর যে কেউ বলে রে মূর্খ সে নরকের আগুনের দায়ে পড়বে 23 অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির কাছে নিজের নৈবেদ্য উৎসর্গ করছ তখন সেই জায়গায় যদি মনে পড়ে যে তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোন কথা আছে 24 তবে সেই জায়গায় বেদির সামনে তোমার নৈবেদ্য রাখ আর চলে যাও প্রথমে তোমার ভাইয়ের সাথে আবার মিলন হও পরে এসে তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ কর 25 তুমি যখন বিপক্ষের সঙ্গে পথে থাক তখন তার সাথে তাড়াতাড়ি মিল কর যদি বিপক্ষ তোমাকে বিচারকের হাতে তুলে দেয় ও বিচারক তোমাকে রক্ষীর হাতে তুলে দেয় আর তুমি কারাগারে বন্দী হও 26 আমি তোমাকে সত্য বলছি যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ পয়সাটা শোধ করবে ততক্ষণ তুমি কোন মতে সেখান থেকে বাইরে আসতে পারবে না 27 তোমরা শুনেছ যে এটা বলা হয়েছিল তুমি ব্যভিচার করও না 28 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে কেউ কোনো স্ত্রীলোকের দিকে লালসাপূর্ণ ভাবে দেখে তখনই সে হৃদয়ে তার সাথে ব্যভিচার করল 29 আর তোমার ডান চোখ যদি তোমায় পাপ করায় তবে তা উপড়ে দূরে ফেলে দাও কারণ তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়া চেয়ে বরং এক অঙ্গ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভাল 30 আর তোমার ডান হাত যদি তোমাকে পাপ করায় তবে তা কেটে দূরে ফেলে দাও কারণ তোমার সমস্ত শরীর নরকে যাওয়ার চেয়ে বরং এক অঙ্গ নষ্ট হওয়া তোমার পক্ষে ভাল 31 আর বলা হয়েছিল যে কেউ নিজের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে সে তাকে ত্যাগপত্র দিক 32 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে কেউ ব্যভিচার ছাড়া অন্য কারণে নিজের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে সে তাকে ব্যাভিচারিনী করে এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিবাহ করে সে ব্যভিচার করে 33 আবার তোমরা শুনেছ আগের কালের লোকদের কাছে বলা হয়েছিল তুমি মিথ্যা দিব্যি কর না কিন্তু প্রভুর উদ্দেশ্যে তোমার সমস্ত প্রতিজ্ঞা পালন কর 34 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি কোন দিব্যি করো না স্বর্গের দিব্যি কর না কারণ তা ঈশ্বরের সিংহাসন এবং পৃথিবীর দিব্যি কর না কারণ তা তাঁর পা রাখার জায়গা 35 আর যিরুশালেমের দিব্যি কর না কারণ তা মহান রাজার শহর 36 আর তোমার মাথার দিব্যি কর না কারণ একগাছা চুল সাদা কি কালো করবার সাধ্য তোমার নেই 37 কিন্তু তোমাদের কথা হ্যাঁ হ্যাঁ না না হোক এর বেশি যা তা শয়তান থেকে জন্মায় 38 তোমরা শুনেছ বলা হয়েছিল চোখের বদলে চোখ ও দাঁতের বদলে দাঁত 39 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি তোমরা মন্দ লোককে বাধা দিয়ো না বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে অন্য গাল তার দিকে ফিরিয়ে দাও 40 আর যে তোমার সাথে বিচারের জায়গায় ঝগড়া করে তোমার পোষাক নিতে চায় তাকে তোমার চাদরও দিয়ে দাও 41 আর যে কেউ এক মাইল যেতে তোমাকে জোর করে তার সঙ্গে দুই মাইল যাও 42 যে তোমার কাছে কিছু চায় তাকে সেটা দাও এবং যে তোমার কাছে ধার চায় তা থেকে বিমুখ হয়ো না 43 তোমরা শুনেছ বলা হয়েছিল তোমার প্রতিবেশীকে প্রেম করবে এবং তোমার শত্রুকে ঘৃণা করবে 44 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি তোমরা নিজের নিজের শত্রুদেরকে ভালবেস এবং যারা তোমাদের ঘৃণা করে তাদের জন্য প্রার্থনা কর 45 যেন তোমরা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও কারণ তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে নিজের সূর্য্য উদয় করেন এবং ধার্মিক অধার্মিকদের উপরে বৃষ্টি দেন 46 কারণ যারা তোমাদের ভালবাসে যদি শুধু তাদেরই ভালবাসো তবে তোমাদের কি পুরষ্কার হবে কর আদায়কারীরাও কি সেই মত করে না 47 আর তোমরা যদি কেবল নিজের নিজের ভাইদেরকে শুভেচ্ছা জানাও তবে বেশি কি কাজ কর অইহূদিরাও কি সেইভাবে করে না 48 অতএব তোমাদের স্বর্গীয় পিতা যেমন সিদ্ধ তোমরাও তেমনি সিদ্ধ হও
Chapter 6
দান ও প্রার্থনার বিষয়ে শিক্ষা।
1 সাবধান লোককে দেখাবার জন্য তাদের সামনে তোমাদের ধর্ম্মকর্ম কর না করলে তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার কাছে তোমাদের পুরষ্কার নেই 2 অতএব তুমি যখন দান কর তখন তোমার সামনে তুরী বাজিও না যেমন ভণ্ডরা লোকের কাছে প্রশংসা পাবার জন্য সমাজঘরে ও পথে করে থাকে আমি তোমাদের সত্য বলছি তারা নিজেদের পুরষ্কার পেয়েছে 3 কিন্তু তুমি যখন দান কর তখন তোমরা ডান হাত কি করছে তা তোমার বাঁ হাতকে জানতে দিও না 4 এইভাবে তোমার দান যেন গোপন হয় তাতে তোমার স্বর্গীয় পিতা যিনি গোপনে দেখেন তিনি তোমাকে ফল দেবেন 5 আর তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন ভণ্ডদের মত হয়ো না কারণ তারা সমাজঘরে ও পথের কোণে দাঁড়িয়ে লোক দেখানো প্রার্থনা করতে ভালবাসে আমি তোমাদের সত্য বলছি তারা নিজেদের পুরষ্কার পেয়েছে 6 কিন্তু তুমি যখন প্রার্থনা কর তখন তোমার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করো আর দরজা বন্ধ করে তোমার পিতা যিনি গোপনে বর্তমান তাঁর কাছে প্রার্থনা করো তাতে তোমার পিতা যিনি গোপনে দেখেন তিনি তোমাকে ফল দেবেন 7 আর প্রার্থনার সময় তোমরা অর্থহীন কথা বার বার বলো না যেমন অইহূদিগণ করে থাকে কারণ তারা মনে করে বেশি কথা বললেই তাদের প্রার্থনার উত্তর পাবে 8 অতএব তোমরা তাদের মত হয়ো না কারণ তোমাদের কি কি প্রয়োজন তা চাওয়ার আগে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা জানেন 9 অতএব তোমরা এইভাবে প্রার্থনা করো হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক 10 তোমার রাজ্য আসুক তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হোক যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হোক 11 আমাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য আজ আমাদেরকে দাও 12 আর আমাদের অপরাধ সব ক্ষমা কর যেমন আমরাও নিজের নিজের অপরাধীদেরকে ক্ষমা করেছি 13 আর আমাদেরকে পরীক্ষাতে এনো না কিন্তু মন্দ থেকে রক্ষা কর 14 কারণ তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন 15 কিন্তু তোমরা যদি লোকদেরকে ক্ষমা না কর তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করবেন না 16 আর তোমরা যখন উপবাস কর তখন ভণ্ডদের মত বিষন্ন মুখ করে থেকো না কারণ তারা লোককে উপবাস দেখাবার জন্য নিজেদের মুখ শুকনো করে আমি তোমাদের সত্য বলছি তারা নিজেদের পুরষ্কার পেয়েছে 17 কিন্তু তুমি যখন উপবাস কর তখন মাথায় তেল মেখ এবং মুখ ধুইয়ো 18 যেন লোকে তোমার উপবাস দেখতে না পায় কিন্তু তোমার পিতা যিনি গোপনে বর্তমান তিনিই দেখতে পান তাতে তোমার পিতা যিনি গোপনে দেখেন তিনি তোমাকে ফল দেবেন 19 তোমরা পৃথিবীতে নিজেদের জন্য অর্থ সঞ্চয় কর না এখানে তো পোকায় ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে এবং এখানে চোরে সিঁধ কেটে চুরি করে 20 কিন্তু স্বর্গে নিজেদের জন্য অর্থ সঞ্চয় কর সেখানে পোকায় ও মর্চ্চ্যায় ক্ষয় করে না সেখানে চোরেও সিঁধ কেটে চুরি করে না 21 কারণ যেখানে তোমার অর্থ সেখানে তোমার মনও থাকবে 22 চোখই শরীরের প্রদীপ অতএব তোমার চোখ যদি নির্মল হয় তবে তোমার সমস্ত শরীর আলোময় হবে 23 কিন্তু তোমার চোখ যদি অশুচি হয় তবে তোমার সমস্ত শরীর অন্ধকারময় হবে অতএব তোমার হৃদয়ের আলো যদি অন্ধকার হয় সেই অন্ধকার কত বড় 24 কেউই দুই কর্তার দাসত্ব করতে পারে না কারণ সে হয়তো এক জনকে ঘৃণা করবে আর এক জনকে ভালবাসবে নয় তো এক জনের প্রতি অনুগত হবে আর এক জনকে তুচ্ছ করবে তোমরা ঈশ্বর এবং ধন দুইয়েরই দাসত্ব করতে পার না 25 এই জন্য আমি তোমাদের বলছি কি খাবার খাব কি পান করব বলে প্রাণের বিষয়ে কিম্বা কি পরব বলে শরীরের বিষয়ে ভেবো না খাদ্য থেকে প্রাণ ও পোশাকের থেকে শরীর কি বড় বিষয় নয় 26 আকাশের পাখিদের দিকে তাকাও তারা বোনেও না কাটেও না গোলাঘরে জমাও করে না তা সত্ত্বেও তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাদের খাবার দিয়ে থাকেন তোমরা কি তাদের থেকে অনেক বেশি শ্রেষ্ঠ নও 27 আর তোমাদের মধ্যে কে ভেবে নিজের বয়স এক হাতমাত্র বাড়াতে পারে 28 আর পোশাকের বিষয়ে কেন চিন্তা কর মাঠের লিলি ফুলের বিষয়ে চিন্তা কর সেগুলি কেমন বাড়ে সে সকল পরিশ্রম করে না সুতোও কাটে না 29 তা সত্ত্বেও আমি তোমাদের বলছি শলোমনও নিজের সমস্ত ঐশ্বর্য্য এর একটির মত সুসজ্জিত ছিলেন না 30 ভাল মাঠের যে ঘাস আজ আছে তা কাল আগুনে ফেলে দেওয়া হবে তা যদি ঈশ্বর এরূপ সাজান তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা তোমাদের কি আরও বেশি সুন্দর করে সাজাবেন না 31 অতএব এই বলে ভেবো না যে 32 কি খাবার খাব বা কি পান করব বা কি পরব অইহূদিরা এসব জিনিস পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয় তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তো জানেন যে এই সমস্ত জিনিস তোমাদের প্রয়োজন আছে 33 কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁর রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর তাহলে এইসব জিনিসও তোমাদের দেওয়া হবে 34 অতএব কালকের জন্য ভেবো না কারণ কাল নিজের বিষয় নিজেই ভাববে দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট
Chapter 7
পরের বিচার।
1 তোমরা বিচার করো না যেন বিচারিত না হও 2 কারণ যেরকম বিচারে তোমরা বিচার কর সেই রকম বিচারে তোমরাও বিচারিত হবে এবং তোমরা যে পরিমাণে পরিমাপ কর সেই পরিমাণে তোমাদের জন্য পরিমাপ করা যাবে 3 আর তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে তাই কেন দেখছ কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে কড়িকাঠ আছে তা কেন ভেবে দেখছ না 4 অথবা তুমি কেমন করে নিজের ভাইকে বলবে এস আমি তোমার চোখ থেকে কুটোটা বের করে দিই আর দেখ তোমার নিজের চোখে কড়িকাঠ রয়েছে 5 হে ভণ্ড আগে নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠ বের করে ফেল আর তখন তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটোটা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে 6 পবিত্র জিনিস কুকুরদেরকে দিও না এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদের সামনে ফেলো না যদি তারা পা দিয়ে তা দলায় এবং ফিরে তোমাদের টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে 7 চাও তোমাদের দেওয়া হবে খোঁজ কর তোমরা পাবে দরজায় আঘাত কর তোমাদের জন্য খুলে দেওয়া হবে 8 কারণ যে কেউ চায় সে গ্রহণ করে এবং যে খোঁজ করে সে পায় আর যে আঘাত করে তার জন্য খুলে দেওয়া হবে 9 তোমাদের মধ্যে এমন লোক কে যে যার ছেলে রুটি চাইলে তাকে পাথর দেবে 10 কিংবা মাছ চাইলে তাকে সাপ দেবে 11 অতএব তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের সন্তানদের ভালো ভালো জিনিস দিতে জান তবে কত না বেশি তোমাদের স্বর্গের পিতা দেবেন যারা তাঁর কাছে চায় তাদের ভালো ভালো জিনিস দেবেন 12 অতএব সব বিষয়ে তোমরা যা যা ইচ্ছা কর যে লোকে তোমাদের প্রতি করে তোমরাও তাদের প্রতি সেই রকম কর কারণ এটাই আইনের ও ভাববাদী গ্রন্থের মূল বিষয় 13 সরু দরজা দিয়ে প্রবেশ কর কারণ বিনাশে যাবার দরজা চওড়া ও পথ চওড়া এবং অনেকেই তা দিয়ে প্রবেশ করে 14 কারণ জীবনে যাবার দরজা সরু ও পথ কঠিন এবং অল্প লোকেই তা পায় 15 নকল ভাববাদীদের থেকে সাবধান তারা মেষের বেশে তোমাদের কাছে আসে কিন্তু ভিতরে গ্রাসকারী নেকড়ে বাঘ 16 তোমরা তাদের ফলের মাধ্যমে তাদের চিনতে পারবে লোকে কি কাঁটাগাছ থেকে দ্রাক্ষাফল কিংবা শিয়ালকাঁটা থেকে ডুমুরফল জোগাড় করে 17 সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে খারাপ গাছে খারাপ ফল ধরে 18 ভাল গাছে খারাপ ফল ধরতে পারে না এবং খারাপ গাছে ভাল ফল ধরতে পারে না 19 যে কোন গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া যায় 20 অতএব তোমরা ওদের ফলের মাধ্যমে ওদেরকে চিনতে পারবে 21 যারা আমাকে হে প্রভু হে প্রভু বলে তারা সবাই যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে এমন নয় কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে সেই পারবে 22 সেই দিন অনেকে আমাকে বলবে হে প্রভু হে প্রভু আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলিনি আপনার নামেই কি ভূত ছাড়াই নি আপনার নামেই কি অনেক আশ্চর্য্য কাজ করিনি 23 তখন আমি তাদের স্পষ্টই বলব আমি কখনও তোমাদের জানি না হে অধর্মাচারীরা আমার কাছ থেকে দূর হও 24 অতএব যে কেউ আমার এই সব কথা শুনে পালন করে তাকে এমন একজন বুদ্ধিমান লোক বলা যাবে যে পাথরের উপরে নিজের ঘর তৈরী করল 25 পরে বৃষ্টি নামল বন্যা এলো বাতাস বয়ে গেল এবং সেই ঘরে লাগল তা সত্ত্বেও তা পড়ল না কারণ পাথরের উপরে তার ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়েছিল 26 আর যে কেউ আমার এই সব কথা শুনে পালন না করে সে এমন একজন বোকা লোকের মত যে বালির উপরে নিজের ঘর তৈরী করল 27 পরে বৃষ্টি নামল বন্যা এলো বাতাস বয়ে গেল এবং সেই ঘরে আঘাত করল তাতে তা পড়ে গেল ও তার পতন ঘোরতর হল 28 যীশু যখন এই সব কথা শেষ করলেন লোকরা তাঁর শিক্ষায় চমৎকৃত হল 29 কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির মত তাদের শিক্ষা দিতেন তাদের ব্যবস্থার শিক্ষকদের মত নয়
Chapter 8
যীশুর নানা ধরনের অলৌকিক কাজ।
1 তিনি পাহাড় থেকে নামলে প্রচুর লোক তাঁকে অনুসরণ করল 2 আর দেখো একজন কুষ্ঠরোগী কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল হে প্রভু যদি আপনার ইচ্ছা হয় আমাকে শুদ্ধ করতে পারেন 3 তখন তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন তিনি বললেন আমার ইচ্ছা তুমি শুদ্ধ হয়ে যাও আর তখনই সে কুষ্ঠরোগ থেকে ভালো হয়ে গেল 4 পরে যীশু তাকে বললেন দেখ এই কথা কাউকেও কিছু বলো না কিন্তু যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং লোকদের কাছে তোমার বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য মোশির দেওয়া আদেশ অনুযায়ী নৈবেদ্য উৎসর্গ কর তাদের কাছে সাক্ষ্য হওয়ার জন্য যে তুমি সুস্থ হয়েছ 5 আর তিনি কফরনাহূমে প্রবেশ করলে একজন শতপতি তাঁর কাছে এসে বিনতি করে বললেন 6 হে প্রভু আমার দাস ঘরে পক্ষাঘাতে পড়ে আছে ভীষণ যন্ত্রণা পাচ্ছে 7 যীশু তাকে বললেন আমি গিয়ে তাকে সুস্থ করব 8 শতপতি উত্তর করলেন হে প্রভু আমি এমন যোগ্য নই যে আপনি আমার বাড়িতে আসেন কেবল কথায় বলুন তাতেই আমার দাস সুস্থ হবে 9 কারণ আমি একজন মানুষ যিনি ক্ষমতা সম্পন্ন আবার সেনারা আমার আদেশমত চলে আমি তাদের এক জনকে যাও বললে সে যায় এবং অন্যকে এস বললে সে আসে আর আমার দাসকে এই কাজ কর বললে সে তা করে 10 এই কথা শুনে যীশু অবাক হলেন এবং যারা পিছন পিছন আসছিল তাদের বললেন আমি তোমাদের সত্যিই বলছি ইস্রায়েলের মধ্যে এত বড় বিশ্বাস কখনো দেখতে পাইনি 11 আর আমি তোমাদের বলছি অনেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে আসবে এবং অব্রাহাম ইসহাক যাকোবের সাথে স্বর্গরাজ্যে একসঙ্গে মেজ এর সামনে আরাম করবে 12 কিন্তু রাজ্যের সন্তানদের বাইরের অন্ধকারে ফেলে দেওয়া যাবে সেই জায়গায় কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁতে ঘষবে 13 পরে যীশু সেই শতপতিকে বললেন চলে যাও যেমন বিশ্বাস করলে তেমনি তোমার প্রতি হোক আর সেই সময়েই তার দাস সুস্থ হল 14 আর যীশু পিতরের ঘরে এসে দেখলেন তাঁর শাশুড়ী বিছানায় শুয়ে আছে কারণ তাঁর জ্বর হয়েছে 15 পরে তিনি তাঁর হাত স্পর্শ করলেন আর জ্বর ছেড়ে গেল তখন তিনি উঠে যীশুর সেবা করতে লাগলেন 16 সন্ধ্যা হলে লোকেরা অনেক ভূতগ্রস্তকে তাঁর কাছে আনল তাতে তিনি বাক্যের মাধ্যমে সেই আত্মাদেরকে ছাড়ালেন এবং সব অসুস্থ লোককে সুস্থ করলেন 17 যেন যিশাইয় ভাববাদীর দ্বারা বলা কথা পূর্ণ হয় তিনি নিজে আমাদের দুর্বলতা সব গ্রহণ করলেন ও রোগ সব বহন করলেন 18 আর যীশু নিজের চারদিকে প্রচুর লোক দেখে হ্রদের অন্য পারে যেতে আদেশ দিলেন 19 তখন একজন ধর্মশিক্ষক এসে তাঁকে বললেন হে গুরু আপনি যে কোনো জায়গায় যাবেন আমি আপনার পিছন পিছন যাব 20 যীশু তাঁকে বললেন শিয়ালদের গর্ত আছে এবং আকাশের পাখিদের বাসা আছে কিন্তু মানবপুত্রের মাথা রাখার কোন জায়গা নেই 21 শিষ্যদের মধ্যে আর একজন তাঁকে বললেন হে প্রভু আগে আমার পিতাকে কবর দিয়ে আসতে অনুমতি দিন 22 কিন্তু যীশু তাঁকে বললেন আমার পিছনে এস মৃতরাই নিজের নিজের মৃতদের কবর দিক 23 আর যীশু নৌকায় উঠলে তাঁর শিষ্যরা তাঁর পিছনে গেলেন 24 আর দেখ সমুদ্রে ভীষণ ঝড় উঠল এমনকি নৌকার উপর ঢেউ কিন্তু যীশু তখন ঘুমোছিলেন 25 তখন শিষ্যরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন হে প্রভু আমাদের উদ্ধার করুন আমরা মারা গেলাম 26 তিনি তাদের বললেন হে অল্প বিশ্বাসীরা কেন তোমরা এত ভয় পাচ্ছ তখন তিনি উঠে বাতাস ও সমুদ্রকে ধমক দিলেন তাতে থেমে গেল 27 আর সেই লোকেরা অবাক হয়ে বললেন আঃ ইনি কেমন লোক বাতাস ও সমুদ্রও যে এর আদেশ মানে 28 পরে তিনি অন্য পারে গাদারীয়দের দেশে গেলে দুই জন ভূতগ্রস্ত লোক কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হল তারা এত ভয়ঙ্কর ছিল যে ঐ পথ দিয়ে কেউই যেতে পারত না 29 আর দেখ তারা চেঁচিয়ে উঠল বলল হে ঈশ্বরের পুত্র আপনার সাথে আমাদের সম্পর্ক কি আপনি কি নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমাদের যন্ত্রণা দিতে এখানে এলেন 30 তখন তাদের থেকে কিছু দূরে বড় এক শূকর পাল চরছিল 31 তাতে ভূতেরা বিনতি করে তাঁকে বলল যদি আমাদেরকে ছাড়ান তবে ঐ শূকর পালে পাঠিয়ে দিন 32 তিনি তাদের বললেন চলে যাও তখন তারা বের হয়ে সেই শূকর পালের মধ্যে প্রবেশ করল আর দেখ সমস্ত শূকর খুব জোরে ঢালু পাড় দিয়ে দৌড়িয়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়ল ও জলে ডুবে মারা গেল 33 তখন পালকেরা পালিয়ে গেল এবং শহরে গিয়ে সব বিষয় বিশেষভাবে সেই ভূতগ্রস্তের বিষয় বর্ণনা করল 34 আর দেখো শহরের সব লোক যীশুর সাথে দেখা করবার জন্য বের হয়ে এলো এবং তাঁকে দেখে নিজেদের জায়গা থেকে চলে যেতে বিনতি করল
Chapter 9
যীশু একজন পক্ষাঘাতীকে আরোগ্য করেন, ও তাহার পাপ ক্ষমা করেন।
1 পরে তিনি নৌকায় উঠে পার হলেন এবং নিজের শহরে এলেন আর দেখ কয়েকটি লোক তাঁর কাছে একজন পক্ষাঘাতীকে আনল সে খাটের উপরে শোয়ানো ছিল 2 তাদের বিশ্বাস দেখে যীশু সেই পক্ষাঘাতী রোগীকে বললেন পুত্র সাহস কর তোমার পাপগুলি ক্ষমা করা হল 3 আর দেখ কয়েক জন ধর্মশিক্ষকরা মনে মনে বলল এ ব্যক্তি ঈশ্বরনিন্দা করছে 4 তখন যীশু তাদের চিন্তা বুঝতে পেরে বললেন তোমরা হৃদয়ে কেন কুচিন্তা করছ 5 কারণ কোনটা সহজ তোমার পাপ ক্ষমা হল বলা না তুমি উঠে বেড়াও বলা 6 কিন্তু পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করতে মানবপুত্রের অধিকার আছে এটা যেন তোমরা জানতে পার এই জন্য তিনি সেই পক্ষাঘাতীকে বললেন ওঠ তোমার বিছানা তুলে নাও এবং তোমার ঘরে চলে যাও 7 তখন সে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল 8 তা দেখে সব লোক ভয় পেয়ে গেল আর ঈশ্বর মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন বলে তার গৌরব করল 9 সেই জায়গা থেকে যেতে যেতে যীশু দেখলেন মথি নামে এক ব্যক্তি কর আদায়ের জায়গায় বসে আছে তিনি তাঁকে বললেন আমার সঙ্গে এস তাতে তিনি উঠে তাঁর সঙ্গে চলে গেলেন 10 পরে তিনি যখন মথির ঘরের মধ্যে খাবার খেতে বসলেন আর অনেক কর আদায়কারী ও পাপী মানুষ এসে যীশুর এবং তাঁর শিষ্যদের খাবার খেতে বসল 11 তা দেখে ফরীশীরা তাঁর শিষ্যদের বলল তোমাদের গুরু কেন কর আদায়কারী ও পাপীদের সাথে খাবার খান 12 যীশু তা শুনে তাদেরকে বললেন সুস্থ লোকদের ডাক্তার দেখাবার দরকার নেই কিন্তু অসুস্থদের প্রয়োজন আছে 13 কিন্তু তোমরা গিয়ে শেখো এই কথার মানে কি আমি দয়াই চাই বলিদান নয় কারণ আমি ধার্মিকদের নয় কিন্তু পাপীদেরকে ডাকতে এসেছি 14 তখন যোহনের শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বলল ফরীশীরা ও আমরা অনেকবার উপবাস করি কিন্তু আপনার শিষ্যরা উপবাস করে না এর কারণ কি 15 যীশু তাদের বললেন বর সঙ্গে থাকতে কি লোকে দুঃখ করতে পারে কিন্তু এমন সময় আসবে যখন তাদের কাছ থেকে বর চলে যাবেন তখন তারা উপবাস করবে 16 পুরাতন কাপড়ে কেউ নতুন কাপড়ের তালী দেয় না কারণ তার তালীতে কাপড় ছিঁড়ে যায় এবং ছেঁড়াটা আরও বড় হয় 17 আর লোকে পুরাতন চামড়ার থলিতে নতুন আঙুরের রস রাখে না রাখলে চামড়ার থলিগুলি ফেটে যায় তাতে দ্রাক্ষারস পড়ে যায় চামড়ার থলিগুলিও নষ্ট হয় না কিন্তু লোকে নূতন চামড়ার থলিতে টাটকা দ্রাক্ষারস রাখে তাতে উভয়েরই রক্ষা হয় 18 যীশু তাদের এই সব কথা বলছেন আর দেখ একজন তত্ত্বাবধায়ক এসে তাঁকে প্রণাম করে বললেন আমার মেয়েটি এতক্ষনে মারা গিয়েছে কিন্তু আপনি এসে তার উপরে হাত রাখুন তাতে সে জীবিত হবে 19 তখন যীশু উঠে তাঁর সঙ্গে গেলেন তাঁর শিষ্যরাও চললেন 20 আর দেখ বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগগ্রস্ত একটি স্ত্রীলোক তাঁর পিছন দিক থকে এসে তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করল 21 কারণ সে মনে মনে বলছিল আমি যদি কেবল ওনার কাপড় ছুঁতে পারি তবেই আমি সুস্থ হব 22 তখন যীশু মুখ ফিরিয়ে তাকে দেখে বললেন বৎসে সাহস কর তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করল সেই সময়ে স্ত্রীলোকটী সুস্থ হল 23 পরে যীশু সেই তত্ত্বাবধায়ক এর বাড়িতে এসে যখন দেখলেন বংশীবাদকরা রয়েছে ও লোকেরা হৈ চৈ করছে 24 তখন যীশু বললেন সরে যাও মেয়েটি তো মরে যায় নি ঘুমিয়ে রয়েছে তখন তারা তাঁকে ঠাট্টা করল 25 কিন্তু লোকদেরকে বের করে দেওয়া হলে তিনি ভিতরে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরলেন তাতে সে উঠে বসল 26 আর এই কথা সেই দেশে ছড়িয়ে পড়ল 27 পরে যীশু সেখান থেকে প্রস্থান করছিলেন দুই জন অন্ধ তাঁকে অনুসরণ করছিল তারা চেঁচিয়ে বলতে লাগল হে দায়ূদসন্তান আমাদের প্রতি দয়া করুন 28 তিনি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে পর সেই অন্ধেরা তাঁর কাছে এলো তখন যীশু তাদের বললেন তোমরা কি বিশ্বাস কর যে আমি এটা করতে পারি তারা তাঁকে বলল হ্যাঁ প্রভু 29 তখন তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করলেন আর বললেন তোমাদের বিশ্বাস অনুসারে তোমাদের প্রতি হোক 30 তখন তাদের চোখ খুলে গেল আর যীশু তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন বললেন দেখ যেন কেউ এটা জানতে না পায় 31 কিন্তু তারা বাইরে গিয়ে সেই দেশের সমস্ত জায়গায় তাঁর বিষয়ে বলতে লাগল 32 তারা বাইরে যাচ্ছে আর দেখ লোকেরা এক ভূতগ্রস্ত বোবাকে তাঁর কাছে আনল 33 ভূত ছাড়ানো হলে সেই বোবা কথা বলতে লাগল তখন সব লোক অবাক হয়ে বলল ইস্রায়েলের মধ্যে এমন কখনও দেখা যায়নি 34 কিন্তু ফরীশীরা বলতে লাগল ভূতদের শাসনকর্তার মাধ্যমে সে ভূত ছাড়ায় 35 আর যীশু সব নগর ও গ্রামে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তিনি লোকদের সমাজঘরে উপদেশ দিলেন ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করলেন এবং সব রকম রোগ ও সব রকম অসুখ থেকে সুস্থ করলেন 36 কিন্তু প্রচুর লোক দেখে তাদের প্রতি যীশুর করুণা হল কারণ তারা ব্যাকুল হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল যেন পালকহীন মেষপাল 37 তখন তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন ফসল প্রচুর বটে কিন্তু কাটার লোক অল্প 38 এই জন্য ফসলের মালিকের কাছে প্রার্থনা কর যেন তিনি নিজের ফসল কাটার জন্য লোক পাঠিয়ে দেন
Chapter 10
যীশু বারোজন প্রেরিতকে প্রেরণ করলেন।
1 পরে তিনি নিজের বারো জন শিষ্যকে কাছে ডেকে তাঁদের অশুচি আত্মাদের উপরে শিক্ষা দিলেন যেন তাঁরা তাদের ছাড়াতে এবং সব রকম রোগব্যাধি থেকে সুস্থ করতে পারেন 2 সেই বারো জন প্রেরিতের নাম এই প্রথম শিমোন যাকে পিতর বলে এবং তাঁর ভাই আন্দ্রিয় সিবদিয়ের পুত্র যাকোব এবং তাঁর ভাই যোহন 3 ফিলিপ ও বর্থলময় মথি থোমা ও কর আদায়কারী আলফেয়ের ছেলে যাকোব ও থদ্দেয় 4 উদ্যোগী শিমোন ও ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা যে তাঁকে শত্রুদের হাতে তুলে দিল 5 এই বারো জনকে যীশু পাঠিয়ে দিলেন আর তাঁদের এই নির্দেশ দিলেন তোমরা অযিহূদীরা যেখানে বাস করে সেখানে যেও না এবং শমরীয়দের কোন শহরে প্রবেশ কর না 6 বরং ইস্রায়েল কুলের হারান মেষদের কাছে যাও 7 আর তোমরা যেতে যেতে এই কথা প্রচার কর স্বর্গরাজ্য কাছাকাছি এসে পড়েছে 8 অসুস্থদেরকে সুস্থ কর মৃতদেরকে বাঁচিয়ে তোল কুষ্ঠ রোগীদেরকে শুদ্ধ কর ভূতদেরকে বের করে দাও কারণ তোমরা বিনামূল্যে পেয়েছ বিনামূল্যে দান কর 9 তোমাদের কোমরের কাপড় সোনা কি রূপা কি পিতল এবং 10 যাওয়ার জন্য থলি কি দুটি জামাকাপড় কি জুতো কি লাঠি এ সব নিও না কারণ যে কাজ করে সে তার বেতনের যোগ্য 11 আর তোমরা যে শহরে কি গ্রামে প্রবেশ করবে সেখানকার কোন ব্যক্তি যোগ্য তা খোঁজ করো আর যে পর্যন্ত অন্য জায়গায় না যাও সেখানে থেকো 12 আর তার ঘরে প্রবেশ করবার সময়ে সেই ঘরের লোকদেরকে শুভেচ্ছা জানাও 13 তাতে সেই ঘরের লোক যদি যোগ্য হয় তবে তোমাদের শান্তি তাদের প্রতি আসুক কিন্তু যদি যোগ্য না হয় তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসুক 14 আর যে কেউ তোমাদের গ্রহণ না করে এবং তোমাদের কথা না শোনে সেই ঘর কিংবা সেই শহর থেকে বের হবার সময়ে নিজের নিজের পায়ের ধূলো ঝেড়ে ফেলো 15 আমি তোমাদের সত্য কথা বলছি বিচার দিনে সেই শহরের দশা থেকে বরং সদোম ও ঘমোরা দেশের দশা সহনীয় হবে 16 দেখ নেকড়েদের মধ্যে যেমন মেষ তেমনি আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি অতএব তোমরা সাপের মতো সতর্ক ও পায়রার মতো অমায়িক হও 17 কিন্তু লোকদের থেকে সাবধান থেকো কারণ তারা তোমাদের বিচার সভায় সমর্পণ করবে এবং নিজেদের সমাজঘরে নিয়ে বেত মারবে 18 এমনকি আমার জন্য তোমরা রাজ্যপাল ও রাজাদের সামনে তাদের ও অইহূদিদের কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য হাজির হবে 19 কিন্তু লোকে যখন তোমাদের সমর্পণ করবে তখন তোমরা কিভাবে কি বলবে সে বিষয়ে ভেবো না কারণ তোমাদের যা বলবার তা সেই সময়েই তোমাদের দান করা যাবে 20 কারণ তোমরা কথা বলবে না কিন্তু তোমাদের পিতার আত্মা তোমাদের মাধ্যমে কথা বলবেন 21 আর ভাই ভাইকে ও বাবা সন্তানকে মৃত্যুতে সমর্পণ করবে এবং সন্তানেরা মা বাবার বিপক্ষে উঠে তাদের হত্যা করাবে 22 আর আমার নামের জন্য তোমাদের সবাই ঘৃণা করবে কিন্তু যে কেউ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সেই পরিত্রাণ পাবে 23 আর তারা যখন তোমাদের এক শহর থেকে তাড়না করবে তখন অন্য শহরে পালিয়ে যেও কারণ আমি তোমাদের সত্য বলছি ইস্রায়েলের সব শহরে তোমাদের কাজ শেষ হবে না যে পর্যন্ত মানবপুত্র না আসেন 24 শিষ্য গুরুর থেকে বড় নয় এবং দাস মনিবের থেকে বড় নয় 25 শিষ্য নিজের গুরুর তুল্য ও দাস নিজের কর্তার সমান হলেই তার পক্ষে যথেষ্ট তারা যখন ঘরের মালিককে ভূতেদের অধিপতি বলেছে তখন তাঁর আত্মীয়দেরকে আরও কি না বলবে 26 অতএব তোমরা তাদের ভয় কর না কারণ এমন ঢাকা কিছুই নেই যা প্রকাশ পাবে না এবং এমন গোপন কিছুই নেই যা জানা যাবে না 27 আমি যা তোমাদের অন্ধকারে বলি তা তোমরা আলোতে বল এবং যা কানে কানে শোন তা ছাদের উপরে প্রচার কর 28 আর যারা দেহ হত্যা করে কিন্তু আত্মা বধ করতে পারে না তাদের ভয় কর না কিন্তু যিনি আত্মাও দেহ দুটি কেই নরকে বিনষ্ট করতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় কর 29 দুটি চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রি হয় না আর তোমাদের পিতার অনুমতি ছাড়া তাদের একটিও মাটিতে পড়ে না 30 কিন্তু তোমাদের মাথার চুলগুলিও সব গোনা আছে 31 অতএব ভয় কর না তোমরা অনেক চড়াই পাখীর থেকে শ্রেষ্ঠ 32 অতএব যে কেউ লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে আমিও নিজের স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে স্বীকার করব 33 কিন্তু যে মানুষদের সামনে আমাকে অস্বীকার করে আমিও নিজের স্বর্গস্থ পিতার সামনে তাকে অস্বীকার করব 34 মনে কর না যে আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি শান্তি দিতে আসিনি কিন্তু খড়গ দিতে এসেছি 35 কারণ আমি বাবার সাথে ছেলের মায়ের সাথে মেয়ের এবং শাশুড়ীর সাথে বৌমার বিচ্ছেদ সৃষ্টি করতে এসেছি 36 আর নিজের নিজের পরিবারের লোকেরা মানুষের শত্রু হবে 37 যে কেউ বাবা কি মাকে আমার থেকে বেশি ভালবাসে সে আমার যোগ্য নয় এবং যে কেউ ছেলে কি মেয়েকে আমার থেকে বেশি ভালবাসে সে আমার যোগ্য নয় 38 আর যে কেউ নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার পিছনে না আসে সে আমার যোগ্য নয় 39 যে কেউ নিজের প্রাণ রক্ষা করে সে তা হারাবে এবং যে কেউ আমার জন্য প্রাণ হারায় সে তা রক্ষা করবে 40 যে তোমাদের গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে আর যে আমাকে গ্রহণ করে সে তো আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন সেই ঈশ্বরকেই গ্রহণ করে 41 যে ভাববাদীকে ভাববাদী বলে গ্রহণ করে সে ভাববাদীর পুরষ্কার পাবে এবং যে ধার্মিককে ধার্মিক বলে গ্রহণ করে সে ধার্মিকের পুরষ্কার পাবে 42 আর যে কেউ এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোন এক জনকে আমার শিষ্য বলে কেবল এক বাটি ঠান্ডা জল পান করতে দেয় আমি তোমাদের সত্য বলছি সে কোনো মতে আপন রাজত্ব থেকে বঞ্চিত হবে না
Chapter 11
যীশু এবং বাপ্তাইজক যোহন।
1 এইভাবে যীশু নিজের বারো জন শিষ্যের প্রতি আদেশ দেবার পর লোকদের শহরে শহরে উপদেশ দেবার ও প্রচার করবার জন্য সে জায়গা থেকে চলে গেলেন 2 পরে যোহন বাপ্তাইজ কারাগার থেকে খ্রীষ্টের কাজের বিষয় শুনে নিজের শিষ্যদের দ্বারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে পাঠালেন 3 এবং তাঁকে বললেন যাঁর আগমন হবে সেই ব্যক্তি কি আপনি না আমরা অন্যের অপেক্ষায় থাকব 4 যীশু উত্তর করে তাদের বললেন তোমরা যাও এবং যা শুনেছ ও দেখেছ সেই খবর যোহনকে দাও অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে খোঁড়ারা হাঁটছে কুষ্ঠ রুগীরা শুদ্ধ হচ্ছে ও বধিরেরা শুনতে পাচ্ছে মৃতেরা জীবিত হচ্ছে গরিবদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে 5 অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে খোঁড়ারা হাঁটছে কুষ্ঠ রুগীরা শুদ্ধ হচ্ছে ও বধিরেরা শুনতে পাচ্ছে মৃতেরা জীবিত হচ্ছে গরীবদের কাছে সুসমাচার প্রচার করা হচ্ছে 6 আর ধন্য সেই ব্যক্তি যে আমাকে গ্রহণ করতে বাধা পায় না 7 তারা চলে যাচ্ছে এমন সময়ে যীশু সবলোককে যোহনের বিষয়ে বলতে লাগলেন তোমরা মরূপ্রান্তে কি দেখতে গিয়েছিলে কি বাতাসে দুলছে এমন একটি নল ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ 8 তবে কি দেখতে গিয়েছিলে কি সুন্দর পোষাক পরা কোন লোককে দেখ যারা সুন্দর পোষাক পরে তারা রাজবাড়িতে থাকে 9 তবে কি জন্য গিয়েছিলে কি একজন ভাববাদীকে দেখবার জন্য হ্যাঁ আমি তোমাদের বলছি ভাববাদী থেকেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে 10 ইনি সেই ব্যক্তি যাঁর বিষয়ে লেখা আছে দেখ আমি নিজের দূতকে তোমার আগে পাঠাব সে তোমার আগে তোমার রাস্তা তৈরী করবে 11 আমি তোমাদের সত্য বলছি স্ত্রীলোকের গর্ভে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যোহন বাপ্তিষ্মদাতা থেকে মহান কেউই সৃষ্টি হয়নি তা সত্ত্বেও স্বর্গরাজ্যে অতি সামান্য যে ব্যক্তি সে তাঁর থেকে মহান 12 আর যোহন বাপ্তিষ্মদাতার সময় থেকে এখন পর্যন্ত স্বর্গরাজ্য আক্রান্ত হচ্ছে এবং আক্রমণকারীরা সবলে তা অধিকার করছে 13 কারণ সমস্ত ভাববাদী ও নিয়ম যোহন পর্যন্ত ভাববাণী বলেছে 14 আর তোমরা যদি গ্রহণ করতে সম্মত হও তবে জানবে যে এলিয়ের আগমন হবে তিনি এই ব্যক্তি 15 যার শোনার মত কান আছে সে শুনুক 16 কিন্তু আমি কার সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব তারা এমন বালকদের সমান যারা বাজারে বসে নিজেদের সঙ্গীদেরকে ডেকে বলে 17 আমরা তোমাদের জন্য বাঁশী বাজালাম তোমরা নাচলে না আমরা দুঃখ প্রকাশ করলাম এবং তোমরা কষ্ট পেলে না 18 কারণ যোহন এসে ভোজন পান করেননি তাতে লোকে বলে সে ভূতগ্রস্থ 19 মানবপুত্র এসে ভোজন পান করেন তাতে লোকে বলে ঐ দেখ একজন পেটুক ও মাতাল কর আদায়কারীদের ও পাপীদের বন্ধু কিন্তু প্রজ্ঞা নিজের কাজের দ্বারা নির্দোষ বলে প্রমাণিত হবে 20 তখন যে যে শহরে যীশু সবচেয়ে বেশি অলৌকিক কাজ করেছিলেন তিনি সেই সব শহরকে ভর্ত্সনা করতে লাগলেন কারণ তারা মন ফেরায় নি 21 কোরাসীন ধিক তোমাকে বৈত্সদা ধিক তোমাকে কারণ তোমাদের মধ্যে যে সব অলৌকিক কাজ করা হয়েছে সে সব যদি সোর ও সীদোনে করা যেত তবে অনেকদিন আগে তারা চট পরে ছাইয়ে বসে মন ফেরাত 22 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি তোমাদের দশা থেকে বরং সোর ও সীদোনের দশা বিচার দিনে সহ্যনীয় হবে 23 আর হে কফরনাহূম তুমি নাকি স্বর্গ পর্যন্ত উঁচু হবে তুমি নরক পর্যন্ত নেমে যাবে কারণ যে সব অলৌকিক কাজ তোমার মধ্যে করা হয়েছে সে সব যদি সদোমে করা যেত তবে তা আজ পর্যন্ত থাকত 24 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি তোমাদের দশা থেকে বরং সদোম দেশের দশা বিচার দিনে সহনীয় হবে 25 সেই সময়ে যীশু এই কথা বললেন হে পিতঃ হে স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু আমি তোমার প্রশংসা করছি কারণ তুমি জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমানদের থেকে এইসব বিষয় গোপন রেখে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছ 26 হ্যাঁ পিতঃ কারণ এটা তোমার দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হয়েছে 27 সবই আমার পিতার মাধ্যমে আমাকে সমর্পণ করা হয়েছে আর পুত্রকে কেউ জানে না একমাত্র পিতা জানেন এবং পিতাকে কেউ জানে না শুধুমাত্র পুত্র জানেন আর পুত্র যার কাছে তাঁকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন সে জানে 28 হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সব আমার কাছে এস আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব 29 আমার যোঁয়ালী নিজেদের উপরে তুলে নাও এবং আমার কাছে শেখো কারণ আমি হৃদয়ে বিনয়ী ও নম্র তাতে তোমরা নিজের নিজের প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাবে 30 কারণ আমার যোঁয়ালী সহজ ও আমার ভার হাল্কা
Chapter 12
বিশ্রামবার বিষয়ে যীশুর উপদেশ।
1 সেই সময়ে যীশু বিশ্রামবারে শস্য ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন আর তাঁর শিষ্যেরা ক্ষুধিত হওয়াতে শস্যের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন 2 কিন্তু ফরীশীরা তা দেখে তাঁকে বলল দেখ বিশ্রামবারে যা করা উচিত নয় তাই তোমার শিষ্যরা করছে 3 তিনি তাদের বললেন দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের খিদে পেলে তিনি কি করেছিলেন সেটা কি তোমরা পড়নি 4 তিনি তো ঈশ্বরের ঘরে প্রবেশ করলেন এবং তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা দর্শনরুটি খেয়েছিলেন যা তাঁদের খাওয়া উচিত ছিল না যা শুধুমাত্র যাজকদেরই উচিত ছিল 5 আর তোমরা কি নিয়মে পড়নি যে বিশ্রামবারে যাজকেরা ঈশ্বরের গৃহে কাজ করে বিশ্রামবার লঙ্ঘন করলেও নির্দোষ থাকে 6 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি এই জায়গা ঈশ্বরের গৃহের থেকেও মহান এক ব্যক্তি আছেন 7 কিন্তু আমি দয়াই চাই বলিদান নয় এই কথার মানে কি তা যদি তোমরা জানতে তবে নির্দোষদের দোষী করতে না 8 কারণ মানবপুত্র বিশ্রামবারের কর্তা 9 পরে তিনি সেখান থেকে চলে গিয়ে তাদের সমাজঘরে প্রবেশ করলেন 10 আর দেখ একটি লোক তার একখানি হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল বিশ্রামবারে সুস্থ করা কি উচিত যীশুর উপরে দোষ দেওয়ার জন্য তারা এই কথা বলল 11 তিনি তাদের বললেন তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে যার একটি মেষ আছে আর সেটি যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায় সে কি তা তুলবে না 12 তবে মেষ থেকে মানুষ আরও কত শ্রেষ্ঠ অতএব বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা উচিত 13 তখন তিনি সেই লোকটিকে বললেন তোমার হাত বাড়িয়ে দাও তাতে সে বাড়িয়ে দিল আর তা অন্যটীর মতো আবার সুস্থ হল 14 পরে ফরীশীরা বাইরে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগল কিভাবে তাঁকে মেরে ফেলা যায় 15 যীশু তা জানতে পেরে সেখান থেকে চলে গেলেন অনেক লোক তাঁকে অনুসরণ করল আর তিনি সবাইকে সুস্থ করলেন 16 এবং এই দৃঢ়ভাবে বারণ করলেন যেন তারা তাঁর পরিচয় না দেয় 17 যেন যিশাইয় ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হয় 18 দেখ আমার দাস তিনি আমার মনোনীত আমার প্রিয় আমার প্রাণ তাঁতে সন্তুষ্ট আমি তাঁর উপরে নিজের আত্মাকে রাখব আর তিনি অইহূদিদের কাছে ন্যায়বিচার প্রচার করবেন 19 তিনি ঝগড়া করবেন না চিত্কার ও আওয়াজ করবেন না পথে কেউ তাঁর স্বর শুনতে পাবে না 20 তিনি থেঁতলা নল ভাঙবেন না জ্বলতে থাকা পলতেকে নিভিয়ে দেবেন না যে পর্যন্ত না ন্যায়বিচার জয়ীরূপে প্রচলিত করেন 21 আর তাঁর নামে অইহূদিরা আশা রাখবে 22 তখন কিছু লোক একজন ভূতগ্রস্তকে তাঁর কাছে নিয়ে এলো সে অন্ধ ও বোবা আর তিনি তাকে সুস্থ করলেন তাতে সেই বোবা কথা বলতে ও দেখতে লাগল 23 এতে সব লোক চমৎকৃত হল ও বলতে লাগল ইনিই কি সেই দায়ূদ সন্তান 24 কিন্তু ফরীশীরা তা শুনে বলল এ ব্যক্তি আর কিছুতে নয় কেবল বেলসবুল ভূতদের রাজার মাধমেই ভূত ছাড়ায় 25 তাদের চিন্তা বুঝতে পেরে যীশু তাদের বললেন যে কোনো রাজ্য যদি নিজের বিরুদ্ধে ভাগ হয় তবে তা ধ্বংস হয় এবং যে কোনো শহর কিংবা পরিবার আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয় তা স্থির থাকবে না 26 আর শয়তান যদি শয়তানকে ছাড়ায় সে তো নিজেরই বিপক্ষে ভিন্ন হল তবে তার রাজ্য কিভাবে স্থির থাকবে 27 আর আমি যদি বেলসবূলের মাধ্যমে ভূত ছাড়াই তবে তোমাদের সন্তানেরা কার মাধ্যমে ছাড়ায় এই জন্য তারাই তোমাদের বিচারকর্তা হবে 28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার মাধ্যমে ভূত ছাড়াই তবে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে 29 আর দেখো আগে শক্তিশালী মানুষকে না বাঁধলে কেউ তার ঘরে ঢুকে তার জিনিসপত্র চুরি করতে পারে না কিন্তু বাঁধলে পর সে তার ঘরের জিনিসপত্র চুরি করতে পারবে 30 যে আমার স্বপক্ষে নয় সে আমার বিপক্ষে এবং যে আমার সঙ্গে কুড়ায় না সে ছড়িয়ে ফেলে 31 এই কারণে আমি তোমাদের বলছি মানুষদের সব পাপ ও নিন্দার ক্ষমা হবে কিন্তু ঈশ্বরনিন্দার ক্ষমা হবে না 32 আর যে কেউ মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে সে ক্ষমা পাবে কিন্তু যে কেউ পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বলে সে ক্ষমা পাবে না এইকালেও নয় পরকালেও নয় 33 হয় গাছকে ভাল বল এবং তার ফলকেও ভাল বল নয় গাছকে খারাপ বল এবং তার ফলকেও খারাপ বল কারণ ফলের মাধ্যমেই গাছকে চেনা যায় 34 হে বিষধর সাপের বংশেরা তোমরা খারাপ হয়ে কেমন করে ভাল কথা বলতে পার কারণ হৃদয়ে যা আছে মুখ তাই বলে 35 ভাল মানুষ ভাল ভান্ডার থেকে ভাল জিনিস বের করে এবং মন্দ লোক মন্দ ভান্ডার থেকে মন্দ জিনিস বের করে 36 আর আমি তোমাদের বলছি মানুষেরা যত বাজে কথা বলে বিচার দিনে সেই সবের হিসাব দিতে হবে 37 কারণ তোমার কথার মাধ্যমে তুমি নির্দোষ বলে গণ্য হবে আর তোমার কথার মাধমেই তুমি দোষী বলে গণ্য হবে 38 তখন কয়েক জন ধর্মশিক্ষক ও ফরীশী তাঁকে বলল হে গুরু আমরা আপনার কাছে একটি চিহ্ন দেখতে ইচ্ছা করি 39 তিনি উত্তর করে তাদের বললেন এই সময়ের মন্দ ও অবিশ্বস্ত লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে কিন্তু যোনা ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোনো চিহ্ন এদেরকে দেওয়া যাবে না 40 কারণ যোনা যেমন তিনদিন তিন রাত বড় মাছের পেটে ছিলেন সেই রকম মানবপুত্রও তিনদিন তিন রাত পৃথিবীর অন্তরে থাকবেন 41 নীনবী শহরের লোকেরা বিচারে এই সময়ের লোকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এদের দোষী করবে কারণ তারা যোনার প্রচারে মন পরিবর্তন করেছিল আর দেখ যোনা থেকেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন 42 দক্ষিণ দেশের রানীর বিচারে এই যুগের লোকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে এদেরকে দোষী করবেন কারণ শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর শেষ থেকে এসেছিলেন আর দেখ শলোমনের থেকেও মহান এক ব্যক্তি এখানে আছেন 43 আর যখন অশুচি আত্মা মানুষের মধ্যে থেকে বের হয়ে যায় তখন জলবিহীন নানা জায়গা দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বিশ্রামের খোঁজ করে কিন্তু তা পায় না 44 তখন সে বলে আমি যেখান থেকে বের হয়ে এসেছি আমার সেই বাড়িতে ফিরে যাই পরে সে এসে তা খালি পরিষ্কার ও সাজানো দেখে 45 তখন সে গিয়ে নিজের থেকেও খারাপ অন্য সাত অশুচি আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে আসে আর তারা সেই জায়গায় প্রবেশ করে বাস করে তাতে সেই মানুষের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরও খারাপ হয় এই সময়ের লোকদের প্রতি তাই ঘটবে 46 তিনি সবলোককে এই সব কথা বলছেন এমন সময়ে দেখ তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর সাথে কথা বলবার চেষ্টায় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন 47 তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল দেখুন আপনার মা ও ভাইয়েরা আপনার সাথে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন 48 কিন্তু এই যে কথা বলল তাকে তিনি উত্তর করলেন আমার মা কে আমার ভাইয়েরাই বা কারা 49 পরে তিনি নিজের শিষ্যদের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন এই দেখ আমার মা ও আমার ভাইরা 50 কারণ যে কেউ আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে সেই আমার ভাই ও বোন ও মা
Chapter 13
স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে সাতটি গল্পকথা।
1 সেই দিন যীশু ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বসলেন 2 আর প্রচুর লোক তাঁর কাছে এলো তাতে তিনি সমুদ্রের মধ্যে একটি নৌকায় উঠে বসলেন এবং সব লোক তীরে দাঁড়িয়ে রইল 3 তখন তিনি গল্পের মাধ্যমে তাদের অনেক কথা বলতে লাগলেন 4 তিনি বললেন দেখ একজন চাষী বীজ বুনতে গেল বোনার সময় কিছু বীজ পথের ধরে পড়ল তাতে পাখিরা এসে সেগুলি খেয়ে ফেলল 5 আর কিছু বীজ পাথুরে মাটিতে পড়ল যেখানে ঠিকমত মাটি পেল না সেগুলি ঠিকমত মাটি না পেয়ে তাড়াতাড়ি অঙ্কুর বের হলো কিন্তু সূর্য্য উঠলে সেগুলি পুড়ে গেল 6 এবং তার শিকড় না থাকাতে শুকিয়ে গেল 7 আর কিছু বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়ল তাতে কাঁটাবন বেড়ে গিয়ে সেগুলি চেপে রাখলো 8 আর কিছু বীজ ভালো জমিতে পড়ল ও ফল দিতে লাগল কিছু একশোগুন কিছু ষাট গুন কিছু ত্রিশ গুন 9 যার কান আছে সে শুনুক 10 পরে শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি জন্য গল্পের মাধ্যমে ওদের কাছে কথা বলছেন 11 তিনি উত্তর করে বললেন স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সব তোমাদের জানতে দেওয়া হয়েছে কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি 12 কারণ যার আছে তাকে দেওয়া যাবে ও তার বেশি হবে কিন্তু যার নেই তার যা আছে সেটাও তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে 13 এই জন্য আমি তোমাদের গল্পের মাধ্যমে কথা বলছি কারণ তারা দেখেও না দেখে এবং শুনেও শোনে না এবং বুঝেও না 14 আর তাদের বিষয়ে যিশাইয়ের এই ভাববাণী পূর্ণ হচ্ছে তোমরা কানে শুনবে কিন্তু কোনো মতে বুঝবে না এবং চোখে দেখবে কিন্তু কোনো মতে জানবে না 15 কারণ এই লোকদের হৃদয় শক্ত হয়েছে তারা কানেও শোনে না ও তারা চোখ বন্ধ করেছে পাছে তারা চোখে দেখে এবং কানে শুনে হৃদয়ে বুঝে এবং ফিরে আসে আর আমি তাদের সুস্থ করি 16 কিন্তু ধন্য তোমাদের চোখ কারণ তা দেখে এবং তোমাদের কান কারণ তা শোনে 17 কারণ আমি তোমাদের সত্য বলছি তোমরা যা যা দেখছ তা অনেক ভাববাদী ও ধার্মিক লোক দেখতে ইচ্ছা করলেও দেখতে পায়নি এবং তোমরা যা যা শুনছ তা তাঁরা শুনতে ইচ্ছা করলেও শুনতে পায়নি 18 অতএব তোমরা বীজ বোনার গল্প শোন 19 যখন কেউ সেই রাজ্যের বাক্য শুনে না বোঝে তখন সেই শয়তান এসে তার হৃদয়ে যা বোনা হয়েছিল তা নিয়ে চলে যায় এ সেই যে পথের পাশে পড়ে থাকা বীজের কথা 20 আর যে পাথুরে জমির বীজ এ সেই যে সেই বাক্য শুনে অমনি আনন্দ সহকারে গ্রহণ করে কিন্তু তাদের ভিতরে শিকড় নেই বলে তারা কম দিন স্থির থাকে 21 পরে সেই বাক্যের জন্য কষ্ট কিংবা তাড়না আসলে তখনই তারা পিছিয়ে যায় 22 আর যে কাঁটাবনের মধ্যে বীজ এ সেই যে সেই বাক্য শোনে কিন্তু সংসারের চিন্তা ভাবনা সম্পতির মায়া ও অনান্য জিনিসের লোভ সেই বাক্যকে চেপে রাখে তাতে সে ফলহীন হয় 23 আর যে ভালো জমির বীজ এ সেই যে সেই বাক্য শোনে তা বোঝে সে বাস্তবিক ফলবান হয় এবং কিছু একশ গুন কিছু ষাট গুন ও কিছু ত্রিশ গুন ফল দেয় 24 পরে তিনি তাদের কাছে আর এক গল্প উপস্থিত করে বললেন স্বর্গরাজ্যকে এমন এক ব্যক্তির সাথে তুলনা করা যায় যিনি নিজের ক্ষেতে ভাল বীজ বপন করলেন 25 কিন্তু লোকে ঘুমিয়ে পড়লে পর তাঁর শত্রুরা এসে ঐ গমের মধ্যে শ্যামাঘাসের বীজ বপন করে চলে গেল 26 পরে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে ফল দিল তখন শ্যামাঘাসও বেড়ে উঠল 27 তাতে সেই মালিকের দাসেরা এসে তাঁকে বলল মহাশয় আপনি কি নিজের ক্ষেতে ভাল বীজ বপন করেননি তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে হল 28 তিনি তাদের বললেন কোন শত্রু এটা করেছে দাসেরা তাঁকে বলল তবে আপনি কি এমন ইচ্ছা করেন যে আমরা গিয়ে তা সংগ্রহ করি 29 তিনি বললেন না কি জানি শ্যামাঘাস সংগ্রহ করবার সময়ে তোমরা তার সাথে গমও উপড়িয়ে ফেলবে 30 ফসল কাটার সময় পর্যন্ত দুটিকেই একসঙ্গে বাড়তে দাও পরে কাটার সময়ে আমি মজুরদের বলব তোমরা প্রথমে শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে পোড়াবার জন্য বোঝা বেঁধে রাখ কিন্তু গম আমার গোলায় সংগ্রহ কর 31 তিনি আর এক গল্প তাদের কাছে উপস্থিত করে বললেন স্বর্গরাজ্য এমন একটি সরিষা দানার সমান যা কোন ব্যক্তি নিয়ে নিজের ক্ষেতে বপন করল 32 সব বীজের মধ্যে ঐ বীজ অতি ক্ষুদ্র কিন্তু বেড়ে উঠলে পর তা শাক সবজির থেকে বড় হয়ে ওঠে এবং বড় বড় ডাল বের হয় তাতে আকাশের পাখিরা এসে তার ডালে বাস করে 33 তিনি তাদের আর এক গল্প বললেন স্বর্গরাজ্য এমন খামির সমান যা কোন স্ত্রীলোক নিয়ে অনেক ময়দার মধ্যে ঢেকে রাখল শেষে পুরোটাই খামিতে পূর্ণ হয়ে উঠল 34 এই সব কথা যীশু গল্পের মাধ্যমে লোকদেরকে বললেন গল্প ছাড়া তাদেরকে কিছুই বলতেন না 35 যেন ভাববাদীর মাধ্যমে বলা এই কথা পূর্ণ হয় আমি গল্প কথায় নিজের মুখ খুলব জগতের শুরু থেকে যা যা গোপন আছে সে সব প্রকাশ করব 36 তখন তিনি সবাইকে বিদায় করে বাড়ি এলেন আর তাঁর শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন ক্ষেতের শ্যামাঘাসের গল্পটি আমাদেরকে স্পষ্ট করে বলুন 37 তিনি উত্তর করে বললেন যিনি ভাল বীজ বপন করেন তিনি মানবপুত্র 38 ক্ষেত হল জগত ভাল বীজ হল ঈশ্বরের রাজ্যের সন্তানরা শ্যামাঘাস হল সেই শয়তানের সন্তানরা 39 যে শত্রু তা বুনেছিল সে দিয়াবল কাটার সময় যুগের শেষ এবং মজুরেরা হল স্বর্গদূত 40 অতএব যেমন শ্যামাঘাস সংগ্রহ করে আগুনে পুড়িয়া দেওয়া হয় তেমনি যুগের শেষে হবে 41 মানবপুত্র নিজের দূতদের পাঠাবেন তাঁরা তাঁর রাজ্য থেকে সব বাঁধাজনক বিষয় ও অধর্মীদেরকে সংগ্রহ করবেন 42 এবং তাদের আগুনে ফেলে দেবেন সেই জায়গায় কান্নাকাটি ও দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হবে 43 তখন ধার্মিকেরা নিজেদের পিতার রাজ্যে সুর্য্যের মত উজ্জ্বল হবে যার কান আছে সে শুনুক 44 স্বর্গরাজ্য ক্ষেতের মধ্যে গোপন এমন ভান্ডার এর সমান যা দেখতে পেয়ে এক ব্যক্তি লুকিয়ে রাখল পরে আনন্দের আবেগে গিয়ে সব বিক্রি করে সেই জমি কিনল 45 আবার স্বর্গরাজ্য এমন এক বণিকের সমান যে ভালো ভালো মুক্তার খোঁজ করছিল 46 সে একটি মহামূল্য মুক্তা দেখতে পেয়ে সব বিক্রি করে তা কিনল 47 আবার স্বর্গরাজ্য এমন এক টানা জালের সমান যা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হলে সব রকম মাছ সংগ্রহ করল 48 জালটা পরিপূর্ণ হলে লোকে পাড়ে টেনে তুলল আর বসে বসে ভালগুলো সংগ্রহ করে পাত্রে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল 49 এইভাবে যুগের শেষে হবে দূতেরা এসে ধার্মিকদের মধ্য থেকে খারাপদের আলাদা করবেন 50 এবং তাদের আগুনে ফেলে দেবেন সেই জায়গায় কান্নাকাটি ও দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ হবে 51 তোমরা কি এই সব বুঝতে পেরেছ তাঁরা বললেন হ্যাঁ 52 তখন তিনি তাঁদের বললেন এই জন্য স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে শিক্ষিত প্রত্যেক ধর্মশিক্ষক শিষ্য হয়েছে যারা এমন মানুষ যে তারা ঘরের মালিকের সমান যে নিজের ভান্ডার থেকে নতুন ও পুরানো জিনিস বের করে 53 এই সকল গল্প শেষ করবার পর যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন 54 আর তিনি নিজের দেশে এসে লোকদের সমাজঘরে তাদের উপদেশ দিতে লাগলেন তাতে তারা চমৎকৃত হয়ে বলল এর এমন জ্ঞান ও এমন অলৌকিক কাজ সব কোথা থেকে হল 55 একি ছুতোরের ছেলে না এর মায়ের নাম কি মরিয়ম না এবং যাকোব যোষেফ শিমোন ও যিহূদা কি এর ভাই না 56 আর তার বোনেরা কি সবাই আমাদের এখানে নেই তবে এ কোথা থেকে এই সব পেল এইভাবে তারা যীশুকে নিয়ে বাধা পেতে লাগল 57 কিন্তু যীশু তাদের বললেন নিজের দেশ ও জাতি ছাড়া আর কোথাও ভাববাদী অসম্মানিত হন না 58 আর তাদের অবিশ্বাসের জন্য তিনি সেখানে প্রচুর অলৌকিক কাজ করলেন না
Chapter 14
যোহন বাপ্তিষ্মদাতা হত্যা।
1 সেই সময় হেরোদ রাজা যীশুর বার্তা শুনতে পেলেন 2 আর নিজের দাসদেরকে বললেন ইনি সেই বাপ্তিষ্মদাতা যোহন তিনি মৃতদের মধ্যে থেকে উঠেছেন আর সেইজন্য এইসব অলৌকিক কাজ সব করতে পারছেন 3 কারণ হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন এবং তার জন্য যোহনকে ধরে বেঁধে কারাগারে রেখেছিলেন 4 কারণ যোহন তাঁকে বলেছিলেন ওকে রাখা আপনার উচিত নয় 5 ফলে তিনি তাঁকে হত্যা করতে ইচ্ছা করলেও লোকদেরকে ভয় করতেন কারণ লোকে তাঁকে ভাববাদী বলে মানত 6 কিন্তু হেরোদের জন্মদিন এলো হেরোদিয়ার মেয়ে সভার মধ্যে নেচে হেরোদকে সন্তুষ্ট করল 7 এই জন্য তিনি শপথ করে বললেন তুমি যা চাইবে তাই তোমাকে দেব 8 তখন সে নিজের মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল যোহন বাপ্তিষ্মদাতার মাথা থালায় করে আমাকে দিন 9 এতে রাজা দুঃখিত হলেন কিন্তু নিজের শপথের কারণে এবং যারা তাঁর সঙ্গে ভোজে বসেছিল তাদের কারণে তা দিতে আজ্ঞা করলেন 10 তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারে যোহনের মাথা কাটালেন 11 আর তাঁর মাথাটি একখানা থালায় করে এনে সেই মেয়েকে দেওয়া হল আর সে তা মায়ের কাছে নিয়ে গেল 12 পরে তাঁর শিষ্যরা এসে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তাঁর কবর দিল এবং যীশুর কাছে এসে তাঁকে খবর দিল 13 যীশু তা শুনে সেখান থেকে নৌকায় করে একা এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন আর লোক সবাই তা শুনে নানা শহর থেকে এসে হাঁটা পথে তাঁর অনুসরণ করল 14 তখন যীশু নৌকা থেকে বের হয়ে অনেক লোক দেখে তাদের জন্য করুণাবিষ্ট হলেন এবং তাদের অসুস্থ লোকদেরকে সুস্থ করলেন 15 পরে সন্ধ্যা হলে শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন এ জায়গা নির্জন বেলাও হয়ে গিয়েছে লোকদেরকে বিদায় করুন যেন ওরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের নিজেদের জন্য খাবার কিনে নেয় 16 যীশু তাঁদের বললেন ওদের যাবার প্রয়োজন নেই তোমরাই ওদেরকে কিছু খাবার দাও 17 তাঁরা তাঁকে বললেন আমাদের এখানে শুধুমাত্র পাঁচটি রুটি ও দুটী মাছ আছে 18 তিনি বললেন সেগুলি এখানে আমার কাছে আন 19 পরে তিনি লোক সবাইকে ঘাসের উপরে বসতে আদেশ করলেন আর সেই পাঁচটি রুটি ও দুটি মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং রুটি ভেঙে শিষ্যদের দিলেন শিষ্যেরা লোকদেরকে দিলেন 20 তাতে সবাই খেল এবং সন্তুষ্ট হল এবং শিষ্যরা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া জড়ো করে পূর্ণ বারো ঝুড়ি তুলে নিলেন 21 যারা খাবার খেয়েছিল তারা স্ত্রী ও শিশু ছাড়া অনুমান পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল 22 আর যীশু তখনই শিষ্যদের বলে দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে যান আর সেইসময়তিনি লোকদেরকে বিদায় করে দেন 23 পরে তিনি লোকদেরকে বিদায় করে নির্জনে প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে চলে গেলেন যখন সন্ধ্যা হল তিনি সেই জায়গায় একা থাকলেন 24 তখন নৌকাটি ডাঙা থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়েছিল ঢেউয়ে টলমল করছিল কারণ হাওয়া তাদের বিপরীত দিক থেকে বইছিল 25 পরে প্রায় শেষ রাত্রিতে যীশু সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে আসলেন 26 তখন শিষ্যেরা তাঁকে সমুদ্রের উপর দিয়ে হাঁটতে দেখে ভয় পেয়ে বললেন এ যে ভূত আর তাঁরা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন 27 কিন্তু যীশু সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন তাঁদেরকে বললেন সাহস কর এখানে আমি ভয় করো না 28 তখন পিতর উত্তর করে তাঁকে বললেন হে প্রভু যদি আপনি হন তবে আমাকে জলের উপর দিয়ে আপনার কাছে যেতে আজ্ঞা করুন 29 তিনি বললেন এস তাতে পিতর নৌকা থেকে নেমে জলের উপর দিয়ে হেঁটে যীশুর কাছে চললেন 30 কিন্তু বাতাস দেখে তিনি ভয় পেলেন এবং ডুবে যেতে যেতে চিৎকার করে ডেকে বললেন হে প্রভু আমায় উদ্ধার করুন 31 তখনই যীশু হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরলেন আর তাঁকে বললেন হে অল্প বিশ্বাসী কেন সন্দেহ করলে 32 পরে তাঁরা নৌকায় উঠলেন আর বাতাস থেমে গেল 33 আর যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা এসে তাঁকে প্রণাম করে বললেন সত্যই আপনি ঈশ্বরের পুত্র 34 পরে তাঁরা পার হয়ে গিনেষরৎ প্রদেশের এসে নৌকা ভূমিতে লাগালেন 35 সেখানকার লোকেরা যীশুকে চিনতে পেরেছিলেন তখন তারা চারদিকে সেই দেশের সব জায়গায় খবর পাঠাল এবং যত অসুস্থ লোক ছিল সবাইকে তাঁর কাছে আনল 36 আর তাঁকে মিনতি করল যেন ওরা তাঁর পোশাকের ঝালর একটু ছুঁতে পারে আর যত লোক তাঁকে ছুঁলো সবাই সুস্থ হল
Chapter 15
অপবিত্রতার বিষয়ে উপদেশ।
1 তখন যিরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুর কাছে এসে বললেন 2 আপনার শিষ্যরা কি জন্য প্রাচীন পূর্বপুরুষদের নিয়ম কানুন পালন করে না কারণ খাওয়ার সময়ে তারা হাত ধোয় না 3 তিনি এর উত্তরে তাদের বললেন তোমরাও তোমাদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের আদেশ অবজ্ঞা কর কেন 4 কারণ ঈশ্বর আদেশ করলেন তুমি তোমার বাবাকে ও মাকে সম্মান করবে আর যে কেউ বাবার কি মায়ের নিন্দা করে তার মৃত্যুদণ্ড অবশ্যই হবে 5 কিন্তু তোমরা বলে থাক যে ব্যক্তি বাবাকে কি মাকে বলে আমি যা কিছু দিয়ে তোমার উপকার করতে পারতাম তা ঈশ্বরকে উত্সর্গ করা হয়েছে 6 সেই ব্যক্তির বাবাকে বা তার মাকে আর সম্মান করার দরকার নেই এইভাবে তোমরা নিজেদের পরম্পরাগত নিয়ম কানুনের জন্য ঈশ্বরের বাক্যকে অগ্রাহ্য করছ 7 ভণ্ডরা যিশাইয় ভাববাদী তোমাদের বিষয়ে একদম ঠিক কথা বলেছেন 8 এই লোকেরা শুধুই মুখে আমার সম্মান করে কিন্তু এদের হৃদয় আমার থেকে দূরে থাকে 9 আর এরা বৃথাই আমার আরাধনা করে এবং মানুষের বানানো নিয়মকে প্রকৃত নিয়ম বলে শিক্ষা দেয় 10 পরে তিনি লোকদেরকে কাছে ডেকে বললেন তোমরা শোনো ও বোঝ 11 মুখের ভেতরে যা কিছু যায় তা যে মানুষকে অপবিত্র করে এমন নয় কিন্তু মুখ থেকে যা বের হয় সে সব মানুষকে অপবিত্র করে 12 তখন শিষ্যরা কাছে এসে তাঁকে বললেন আপনি কি জানেন এই কথা শুনে ফরীশীরা আঘাত পেয়েছে 13 তিনি এর উত্তরে বললেন আমার স্বর্গীয় পিতা যে সমস্ত চারা রোপণ করেননি সে সমস্তই উপড়িয়ে ফেলা হবে 14 ওদের কথা বাদ দাও ওরা নিজেরা অন্ধ হয়ে অন্য অন্ধদের পথ দেখায় অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখায় তবে দুজনেই গর্তে পড়বে 15 পিতর তাঁকে বললেন এই গল্পের অর্থ আমাদেরকে বুঝিয়ে দিন 16 তিনি বললেন তোমরাও কি এখনও বুঝতে পার না 17 এটা কি বোঝ না যে যা কিছু মুখের ভিতরে যায় তা পেটের মধ্যে যায় পরে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় 18 কিন্তু যা যা মুখ থেকে বের হয় তা হৃদয় থেকে আসে আর সেগুলোই মানুষকে অপবিত্র করে 19 কারণ হৃদয় থেকে কুচিন্তা নরহত্যা ব্যভিচার বেশ্যাগমন চুরি মিথ্যাসাক্ষ্য ঈশ্বরনিন্দা বের হয়ে আসে 20 এই সমস্তই মানুষকে অপবিত্র করে কিন্তু হাত না ধুয়ে খাবার খেলে মানুষ তাতে অপবিত্র হয় না 21 পরে যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন 22 আর দেখ ঐ অঞ্চলের একটি কনানীয় মহিলা এসে চিত্কার করে বলতে লাগল হে প্রভু দায়ূদসন্তান আমাকে দয়া করুন আমার মেয়েটি ভূতগ্রস্ত হয়ে অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছে 23 কিন্তু তিনি তাকে কিছুই উত্তর দিলেন না তখন তাঁর শিষ্যেরা কাছে এসে তাঁকে অনুরোধ করলেন একে বিদায় করুন কারণ এ আমাদের পিছন পিছন চিত্কার করছে 24 তিনি এর উত্তরে বললেন ইস্রায়েলের হারান মেষ ছাড়া আর কারও কাছে আমাকে পাঠানো হয়নি 25 কিন্তু মহিলাটি এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল প্রভু আমার উপকার করুন 26 তিনি বললেন সন্তানদের খাবার নিয়ে কুকুরদের কাছে ফেলে দেওয়া উচিত নয় 27 তাতে সে বলল হ্যাঁ প্রভু কারণ কুকুরেরাও তাদের মালিকের টেবিলের নিচে পড়ে থাকা সন্তানদের সেই সব খাবারের গুঁড়াগাঁড়া তারা খায় 28 তখন যীশু এর উত্তরে তাকে বললেন হে নারী তোমার বড়ই বিশ্বাস তোমার যেমন ইচ্ছা তেমনি তোমার প্রতি হোক আর সেই মুহূর্তেই তার মেয়ে সুস্থ হল 29 পরে যীশু সেখান থেকে গালীল সমুদ্রের ধারে উপস্থিত হলেন এবং পাহাড়ে উঠে সেই জায়গায় বসলেন 30 আর অনেক লোক তাঁর কাছে আসতে লাগল তারা তাদের সঙ্গে খোঁড়া অন্ধ বোবা নুলা এবং আরও অনেক লোককে নিয়ে তাঁর পায়ের কাছে ফেলে রাখল আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন 31 আর এইভাবে বোবারা কথা বলছিল নুলারা সুস্থ হচ্ছিল খোঁড়ারা হাঁটতে পারছিল এবং অন্ধেরা দেখতে পাচ্ছিল তখন তারা এই সব দেখে খুবই আশ্চর্য্য হল এবং ইস্রায়েলের ঈশ্বরের গৌরব করল 32 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের কাছে ডেকে বললেন এই লোকদের জন্য আমার করুণা হচ্ছে কারণ এরা আজ তিন দিন আমার সঙ্গে আছে এবং এদের কাছে খাবার কিছুই নেই আর আমি এদেরকে না খাইয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাই না কারণ এরা রাস্তায় দুর্বল হয়ে পড়বে 33 তাঁর শিষ্যেরা উত্তর দিয়ে বললেন এই নির্জন জায়গায় আমরা কোথা থেকে এত রুটি পাবো এবং এত লোককে কিভাবে তৃপ্ত করব 34 যীশু তাঁদের বললেন তোমাদের কাছে কতগুলি রুটি আছে তাঁরা বললেন সাতখানা আর কয়েকটি ছোট মাছ আছে 35 তখন তিনি লোকদেরকে জমিতে বসতে নির্দেশ দিলেন 36 পরে তিনি সেই সাতখানা রুটি ও সেই কয়েকটি মাছ নিলেন ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙলেন এবং শিষ্যদের দিলেন শিষ্যেরা লোকদেরকে দিলেন 37 তখন লোকেরা পেট ভরে খেল এবং সন্তুষ্ট হলো পরে শিষ্যরা পড়ে থাকা অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া জড়ো করে পুরোপুরি সাত ঝুড়ি ভর্তি করে তুলে নিলেন 38 যারা খাবার খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বাদে শুধু পুরুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার 39 পরে যীশু লোকদেরকে বিদায় করে তিনি নৌকা উঠে মগদনের সীমাতে উপস্থিত হলেন
Chapter 16
প্রভু যীশুর বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা।
1 পরে ফরীশীরা ও সদ্দূকীরা তাঁর কাছে এসে পরীক্ষা করার জন্য যীশুকে অনুরোধ করল যেন তিনি তাদের আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখান 2 কিন্তু তিনি এর উত্তরে তাদের বললেন সন্ধ্যা হলে তোমরা বলে থাক আজ আবহাওয়া ভাল থাকবে কারণ আকাশ লাল হয়েছে 3 আর সকালে বলে থাক, আজ ঝড় হবে, কারণ আকাশ লাল ও মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। তোমরা আকাশের ভাব বুঝতে পার, কিন্তু কালের চিহ্নের বিষয়ে বুঝতে পার না। 4 এই কালের দুষ্ট ও অবিশ্বস্ত লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন তাদের দেওয়া যাবে না তখন তিনি তাদের ছেড়ে চলে গেলেন 5 শিষ্যেরা অন্য পাড়ে যাবার সময় রুটি নিতে ভুলে গিয়েছিলেন 6 যীশু তাঁদের বললেন তোমরা সতর্ক হও ফরীশী ও সদ্দূকীদের তাড়ী খামির থেকে সাবধান থাক 7 তখন তাঁরা নিজেদের মধ্য তর্ক করে বলতে লাগলেন আমরা রুটি আনিনি বলে তিনি এমন বলছেন 8 তা বুঝতে পেরে যীশু বললেন হে অল্প বিশ্বাসীরা তোমদের রুটি নেই বলে কেন নিজেদের মধ্য তর্ক করছ 9 তোমরা কি এখনও কিছু জানতে বা বুঝতে পারছ না মনেও কি পড়ে না সেই পাঁচ হাজার লোকের খাবার পাঁচটি রুটি দিয়ে আর তোমরা কত ঝুড়ি তুলে নিয়েছিলে 10 এবং সেই চার হাজার লোকের খাবার সাতটি রুটি আর কত ঝুড়ি তুলে নিয়েছিলে 11 তোমরা কেন বোঝ না যে আমি তোমাদের রুটি র বিষয়ে বলিনি কিন্তু তোমরা ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সাবধান থাক 12 তখন তাঁরা বুঝলেন তিনি রুটি র খামির থেকে নয় কিন্তু ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান থাকার কথা বললেন 13 পরে যীশু কৈসরিয়ার ফিলিপীর অঞ্চলে গিয়ে তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন মানবপুত্র কে এ বিষয়ে লোকে কি বলে 14 তাঁরা বললেন কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিষ্মদাতা যোহন কেউ কেউ বলে আপনি এলিয় আর কেউ কেউ বলে আপনি যিরমিয় কিংবা ভাববাদীদের কোন একজন 15 তিনি তাঁদের বললেন কিন্তু তোমরা কি বল আমি কে 16 শিমোন পিতর এর উত্তর দিয়ে তাঁকে বললেন আপনি সেই খ্রীষ্ট জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র 17 তখন যীশু উত্তরে তাঁকে বললেন যোনার পুত্র শিমোন ধন্য তুমি কারণ রক্ত ও মাংস তোমার কাছে এ বিষয় প্রকাশ করে নি কিন্তু আমার স্বর্গস্থ পিতা প্রকাশ করেছেন 18 আর আমিও তোমাকে বলছি তুমি পিতর আর এই পাথরের উপরে আমি আমার মণ্ডলী গাঁথব আর নরকের মৃত্যুর কোন শক্তিই মণ্ডলীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না 19 আমি তোমাকে স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলি দেব আর তুমি পৃথিবীতে যা কিছু বাঁধবে তা স্বর্গে বাঁধা হবে এবং পৃথিবীতে যা কিছু খুলবে তা স্বর্গে খোলা হবে 20 তখন তিনি শিষ্যদের এই আজ্ঞা দিলেন আমি যে সেই খ্রীষ্ট একথা কাউকে বল না 21 সেই সময় থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের স্পষ্টই বললেন যে তাঁকে যিরুশালেমে যেতে হবে এবং প্রাচীনদের প্রধান যাজকদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক দুঃখ সহ্য করতে হবে ও মৃত্যুবরণ করতে হবে আর তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে 22 তখন পিতর তাঁকে এক পাশে নিয়ে গিয়ে ধমক দিতে লাগলেন বললেন প্রভু এই সব আপনার থেকে দূরে থাকুক এই সব আপনার প্রতি কখনও ঘটবে না 23 কিন্তু তিনি মুখ ফিরিয়ে পিতরকে বললেন আমার সামনে থেকে দূর হও শয়তান তুমি আমার বাধা স্বরূপ কারণ তুমি ঈশ্বরের কথা নয় কিন্তু যা মানুষের কথা তাই তুমি ভাবছ 24 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করতে চায় তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক নিজের ক্রুশ তুলে নিক এবং আমাকে অনুসরণ করুক 25 যে কেউ তার প্রাণ রক্ষা করতে ইচ্ছা করে সে তা হারাবে আর যে কেউ আমার জন্য প্রাণ হারায় সে তা পাবে 26 মানুষ যদি সমস্ত জগত লাভ করে নিজের প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ হবে কিম্বা মানুষ তার প্রাণের পরিবর্তে কি দিতে পারে 27 কারণ মানবপুত্র তাঁর দূতদের সঙ্গে তাঁর পিতার প্রতাপে আসবেন আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুযায়ী ফল দেবেন 28 আমি তোমাদের সত্যি বলছি যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে যারা কোন মতে মৃত্যু দেখবে না যে পর্যন্ত মানবপুত্রকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখে
Chapter 17
যীশু উজ্জ্বল রূপ গ্রহণ করেন।
1 ছয় দিন পরে যীশু কেবল পিতর যাকোব ও তাঁর ভাই যোহনকে সঙ্গে করে এক উঁচু পাহাড়ের নির্জন জায়গায় নিয়ে গেলেন 2 পরে তিনি তাঁদের সামনেই চেহার পাল্টালেন তাঁর মুখ সূর্য্যের মতো উজ্জ্বল এবং তাঁর পোশাক আলোর মতো সাদা হল 3 আর দেখ মোশি ও এলিয় তাঁদের দেখা দিলেন তাঁরা যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন 4 তখন পিতর যীশুকে বললেন প্রভু এখানে আমাদের থাকা ভাল যদি আপনার ইচ্ছা হয় তবে আমি এখানে তিনটি কুটির তৈরী করি একটি আপনার জন্য একটি মোশির জন্য এবং একটি এলিয়ের জন্য 5 তিনি কথা বলছিলেন এমন সময় দেখা গেল একটি উজ্জ্বল মেঘ তাঁদের ছায়া করল আর সেই মেঘ থেকে এই বাণী হল ইনিই আমার প্রিয় পুত্র এঁর ওপর আমি সন্তুষ্ট এঁর কথা শোন 6 এই কথা শুনে শিষ্যেরা উপুড় হয়ে পড়লেন এবং অত্যন্ত ভয় পেলেন 7 পরে যীশু কাছে এসে তাঁদের স্পর্শ করে বললেন ওঠো ভয় কর না 8 তখন তাঁরা চোখ তুলে আর কাউকে দেখতে পেলেন না সেখানে শুধু যীশু একা ছিলেন 9 পাহাড় থেকে নেমে আসার সময়ে যীশু তাঁদের এই আদেশ দিলেন যে পর্যন্ত মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে না ওঠেন সে পর্যন্ত তোমরা এই দর্শনের কথা কাউকে বোলো না 10 তখন শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তবে ব্যবস্থার শিক্ষকেরা কেন বলেন যে প্রথমে এলিয়কে আসতে হবে 11 যীশু এর উত্তরে বললেন হ্যাঁ সত্যি এলিয় আসবেন এবং সব কিছু পুনরায় স্থাপন করবেন 12 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি এলিয় এসেছিলেন এবং লোকেরা তাঁকে চিনতে পারেনি বরং তাঁর প্রতি যা ইচ্ছা তাই করেছে একইভাবে মানবপুত্রকেও তাদের থেকে দুঃখ সহ্য করতে হবে 13 তখন শিষ্যেরা বুঝলেন যে তিনি তাঁদের বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের বিষয় বলছেন 14 পরে তাঁরা লোকদের কাছে এলে এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে হাঁটু গেঁড়ে বলল 15 প্রভু আমার ছেলেকে দয়া করুন কারণ সে মৃগী রোগে আক্রান্ত এবং খুবই কষ্ট পাচ্ছে আর সে বার বার জলে ও আগুনে পড়ে যায় 16 আর আমি আপনার শিষ্যদের কাছে তাকে এনেছিলাম কিন্তু তাঁরা তাকে সুস্থ করতে পারলেন না 17 যীশু বললেন হে অবিশ্বাসী ও বিপথগামী বংশ আমি কত দিন তোমাদের সঙ্গে থাকব কত দিন তোমাদের ভার বহন করব তোমরা ওকে এখানে আমার কাছে আন 18 পরে যীশু ভুতকে ধমক দিলেন তাতে সেই ভূত তাকে ছেড়ে দিল আর সেই ছেলেটি সেই মুহূর্তেই সুস্থ হল 19 তখন শিষ্যেরা গোপনে যীশুর কাছে এসে বললেন কি জন্য আমরা ওর মধ্যে থেকে ভূত ছাড়াতে পারলাম না 20 তিনি তাঁদের বললেন কারণ তোমাদের বিশ্বাস অল্প বলে কারণ আমি তোমাদের সত্যি বলছি যদি তোমাদের একটি সরষে দানার মতো বিশ্বাস থাকে তবে তোমরা এই পাহাড়কে বলবে 21 ‘এখান থেকে ঐখানে যাও,’ আর সেটা সরে যাবে এবং তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকবে না।"
যীশু দ্বিতীয়বার তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে ভাববাণী বলেন।
22 যখন তাঁরা গালীলে একসঙ্গে ছিলেন তখন যীশু তাঁদের বললেন মানবপুত্র লোকেদের হাতে সমর্পিত হবেন 23 এবং তারা তাঁকে মেরে ফেলবে আর তৃতীয় দিনে তিনি পুনরায় জীবিত হয়ে উঠবেন এই কথা শুনে তাঁরা খুবই দুঃখিত হলেন 24 পরে তাঁরা কফরনাহূমে এলে যারা আধূলো অর্থাৎ ঈশ্বরের মন্দিরের কর আদায় করত তারা পিতরের কাছে এসে বলল তোমাদের গুরু কি আধূলো মন্দিরের কর দেন না তিনি বললেন হ্যাঁ দেন 25 পরে তিনি বাড়িতে এলে যীশুই আগে তাঁকে বললেন শিমোন তোমার কি মনে হয় পৃথিবীর রাজারা কাদের থেকে কর বা রাজস্ব আদায় করে থাকেন কি নিজের সন্তানদের কাছ থেকে না অন্য লোকেদের কাছ থেকে 26 পিতর বললেন অন্য লোকদের কাছ থেকে তখন যীশু তাঁকে বললেন তবে সন্তানেরা স্বাধীন 27 তবুও আমরা যেন ঐ কর আদায়কারীদের অপমান বোধের কারণ না হই এই জন্য তুমি সমুদ্রে গিয়ে বঁড়শি ফেল তাতে প্রথমে যে মাছটি উঠবে সেটা ধরে তার মুখ খুললে একটি মুদ্রা পাবে সেটা নিয়ে আমার এবং তোমার জন্য ওদেরকে কর দাও
Chapter 18
স্বর্গরাজ্যে মহান কে, এ বিষয়ে শিক্ষা।
1 সেই সময় শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে বললেন তবে স্বর্গরাজ্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে 2 তিনি একটি শিশুকে তাঁর কাছে ডাকলেন ও তাদের মধ্য দাঁড় করিয়ে দিলেন 3 এবং বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি তোমরা যদি মন না ফেরাও ও শিশুদের মতো না হয়ে ওঠ তবে কোন ভাবেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না 4 অতএব যে কেউ নিজেকে এই শিশুর মতো নত করে সে স্বর্গরাজ্যে শ্রেষ্ঠ 5 আর যে কেউ এই রকম কোন শিশুকে আমার নামে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে 6 কিন্তু যেসব শিশুরা আমাকে বিশ্বাস করে এবং যদি কেউ তাদের বিশ্বাসে বাধা দেয় তার গলায় ভারী ভারি পাথর বেঁধে তাকে সমুদ্রের গভীর জলে ডুবিয়ে দেওয়া বরং তার পক্ষে ভাল 7 লোককে বাধার কারণ এবং মানুষের পাপের কারণ হওয়ার জন্য জগতকে ধিক কারণ বাধার সময় অবশ্যই আসবে কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে যার মাধ্যমে তা আসে 8 আর তোমার হাত কি পা যদি তোমায় পাপের পথে নিয়ে যায় তবে তা কেটে ফেলে দাও দুই হাত কিম্বা দুই পা নিয়ে নরকের অনন্ত আগুনে প্রবেশ করার থেকে বরং খোঁড়া কিম্বা পঙ্গু হয়ে ভালোভাবে জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল 9 আর তোমার চোখ যদি তোমায় পাপের পথে নিয়ে যায় তবে তা উপড়িয়ে ফেলে দাও দুই চোখ নিয়ে অগ্নিময় নরকে যাওয়ার থেকে বরং একচোখ নিয়ে জীবনে প্রবেশ করা তোমার ভাল 10 11 এই ছোট শিশুদের একজনকেও তুচ্ছ কোর না, কারণ আমি তোমাদের বলছি, তাদের দূতগণ স্বর্গে সবসময় আমার স্বর্গস্থ পিতার মুখ দর্শন করেন। 11 12 তোমাদের কি মনে হয় কোন ব্যক্তির যদি একশটি ভেড়া থাকে আর তাদের মধ্যে একটি হারিয়ে যায় তবে সে কি অন্য নিরানব্বইটাকে ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে ঐ হারানো ভেড়াটির খোঁজ করে না 13 আর যদি সে কোন ভাবে সেটি পায় তবে আমি তোমাদের সত্যি বলছি যে নিরানব্বইটা হারিয়ে যায় নি তাদের থেকে সে বেশি আনন্দ করে যেটা সে হারিয়ে ফেলেছিল সেটিকে খুঁজে পেয়ে 14 তেমনি এই ছোট শিশুদের মধ্য একজনও যে ধ্বংস হয় তা তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা নয় 15 আর যদি তোমার ভাই তোমার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ করে তবে তাঁর কাছে যাও এবং গোপনে তাঁর সেই দোষ তাঁকে বুঝিয়ে দাও সে যদি তোমার কথা শোনে তবে তুমি আবার তোমার ভাইকে ফিরে পেলে 16 কিন্তু যদি সে না শোনে তবে আরও দুই একজন ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে যাও যেন দুই কিম্বা তিনজন সাক্ষীর মুখে সমস্ত কথা সঠিক প্রমাণিত করা হয় 17 আর যদি সে তাদের কথা অমান্য করে তখন মণ্ডলীকে বল আর যদি মণ্ডলীর কথাও অমান্য করে তবে সে তোমার কাছে অযিহুদী লোকের ও কর আদায়কারীদের মতো হোক 18 আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি তোমরা পৃথিবীতে যা কিছু বাঁধবে তা স্বর্গে বাঁধা হবে এবং পৃথিবীতে যা কিছু খুলবে তা স্বর্গে খোলা হবে 19 আমি তোমাদের কে সত্য বলছি পৃথিবীতে তোমাদের মধ্যে দুই জন যদি একমত হয়ে কোন বিষয় নিয়ে প্রার্থনা কর তবে আমার স্বর্গের পিতা তোমাদের জন্য তা পূরণ করবেন 20 কারণ যেখানে দুই কি তিনজন আমার নামে একত্র হয় সেইখানে আমি তাদের মধ্যে আছি 21 তখন পিতর তাঁর কাছে এসে বললেন প্রভু আমার ভাই আমার কাছে কত বার অপরাধ করলে আমি তাকে ক্ষমা করব সাতবার পর্যন্ত কি 22 যীশু তাঁকে বললেন তোমাকে বলছি সাতবার পর্যন্ত না কিন্তু সত্তর গুণ সাতবার পর্যন্ত 23 এজন্য স্বর্গরাজ্য এমন একজন রাজার সমান যিনি তাঁর দাসদের কাছে হিসাব নিতে চাইলেন 24 তিনি হিসাব আরম্ভ করলে তখন এক জনকে তাঁর কাছে নিয়ে আসা হল যে তাঁর কাছে দশ হাজার তালন্ত এক তালন্ত সমান পনেরো বত্সরের পারিশ্রমিকের সমানের থেকেও বেশী টাকা ঋণ নিয়েছিল 25 কিন্তু তার শোধ করার সামর্থ না থাকায় তার প্রভু তাকে ও তার স্ত্রী সন্তানদের এবং সব কিছু বিক্রি করে আদায় করতে আদেশ দিলেন 26 তাতে সেই দাস তাঁর পায়ে পড়ে প্রণাম করে বলল হে প্রভু আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন আমি আপনার সব কিছু শোধ করব 27 তখন সেই দাসকে দেখে তার রাজার করুণা হল ও তাকে মুক্ত করলেন এবং তার ঋণ ক্ষমা করলেন 28 কিন্তু সেই দাস বাইরে গিয়ে তার সহদাসদের মধ্য এক জনকে দেখতে পেল যে তার একশ সিকি ধার নিয়েছিল সে তার গলাটিপে ধরে বলল তুই যা ধার নিয়েছিস তা শোধ কর 29 তখন তার দাস তার পায়ে পড়ে অনুরোধের সঙ্গে বলল আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর আমি তোমার ঋণ শোধ করব 30 তবুও সে রাজি হল না কিন্তু গিয়ে তাকে জেলখানায় বন্দী করে রাখল যতক্ষণ না সে ঋণ শোধ করে 31 এই ব্যাপার দেখে তার অন্য দাসেরা খুবই দুঃখিত হল আর তাদের রাজার কাছে গিয়ে সমস্ত বিষয়ে জানিয়ে দিল 32 তখন তার রাজা তাকে কাছে ডেকে বললেন দুষ্ট দাস তুমি আমার কাছে অনুরোধ করেছিলে বলে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করেছিলাম 33 আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করেছিলাম তেমনি তোমার দাসদের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না 34 আর তার রাজা রেগে গিয়ে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য জেলখানার রক্ষীদের কাছে তাকে সমর্পণ করলেন যতক্ষণ না সে সমস্ত ঋণ শোধ করে 35 আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এমন করবেন যদি তোমরা সবাই হৃদয় থেকে নিজের নিজের ভাইকে ক্ষমা না কর
Chapter 19
1 এই সব কথা সমাপ্ত করার পর যীশু গালীল থেকে চলে গেলেন পরে যর্দন নদীর অন্য পারে যিহূদিয়ার অঞ্চলে উপস্থিত হলেন 2 আর অনেক লোক তাঁকে অনুসরণ করতে লাগলো এবং তিনি সেখানে লোকদেরকে সুস্থ করলেন 3 আর ফরীশীরা তাঁর কাছে এসে পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করল যে কোনো কারণে নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া কি উচিত 4 তিনি বললেন তোমরা কি পড়নি যে সৃষ্টিকর্তা প্রথমে পুরুষ ও স্ত্রী করে তাদের সৃষ্টি করেছিলেন 5 আর বলেছিলেন এই জন্য মানুষ তার বাবা ও মাকে ত্যাগ করে নিজের স্ত্রীতে আসক্ত হবে এবং তারা দুই জন এক দেহ হবে 6 সুতরাং তারা আর দুই নয় কিন্তু এক দেহ অতএব ঈশ্বর যাদেরকে এক করেছেন মানুষ যেন তাদের আলাদা না করে 7 তারা তাঁকে বলল তবে মোশি কেন ত্যাগপত্র দিয়ে ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছেন 8 তিনি তাদের বললেন তোমাদের হৃদয় কঠিন বলে মোশি তোমাদের নিজের নিজের স্ত্রীকে ত্যাগ করার অনুমতি দিয়েছিলেন কিন্তু একদম প্রথম থেকে এমন ছিল না 9 আর আমি তোমাদের বলছি যে কেউ ব্যভিচার ছাড়া অন্য কারণে নিজের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করে এবং অন্য কাউকে বিয়ে করে সে ব্যভিচার করে এবং যে ব্যক্তি সেই পরিত্যক্তা স্ত্রীকে বিয়ে করে সেও ব্যভিচার করে 10 শিষ্যেরা তাঁকে বললেন স্বামী স্ত্রীর সম্বন্ধ যদি এই রকম হয় তবে তো বিয়ে না করাই ভাল 11 তিনি তাঁদের বললেন সবাই এই কথা মানতে পারে না কিন্তু যাদেরকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তারাই এমন পারে 12 আর এমন নপুংসক আছে যারা মায়ের গর্ভেই তেমন হয়েই জন্ম নিয়েছে আর এমন নপুংসক আছে যাদেরকে মানুষে নপুংসক করেছে আর এমন নপুংসক আছে যারা স্বর্গরাজ্যের জন্য নিজেদেরকে নপুংসক করেছে যে এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সে গ্রহণ করুক 13 তখন কতগুলি শিশুকে তাঁর কাছে আনা হল যেন তিনি তাদের উপরে তাঁর হাত রাখেন ও প্রার্থনা করেন তাতে শিষ্যেরা তাদের ধমক দিতে লাগলেন 14 কিন্তু যীশু বললেন শিশুদের আমার কাছে আসতে দাও বারণ করো না কারণ স্বর্গরাজ্য এই রকম লোকেদেরই 15 পরে তিনি তাদের উপরে হাত রাখলেন এবং সেখান থেকে চলে গেলেন 16 দেখোএক ব্যক্তি এসে তাঁকে বলল হে গুরু অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য আমি কি ধরনের ভাল কাজ করব 17 তিনি তাকে বললেন আমাকে কি ভালো তার বিষয়ে কেন জিজ্ঞাসা করছ সৎ মাত্র একজনই আছেন কিন্তু তুমি যদি জীবনে প্রবেশ করতে চাও তবে সমস্ত আদেশ পালন কর 18 সে বলল কোন কোন আজ্ঞা যীশু বললেন এগুলি মানুষ হত্যা করো না ব্যভিচার করো না চুরি করো না মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না 19 বাবা ও মাকে সম্মান কর এবং তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসো 20 সেই যুবক তাঁকে বলল আমি এই সব পালন করেছি এখন আমার আর কি ত্রুটি আছে 21 যীশু তাকে বললেন যদি তুমি সিদ্ধ হতে চাও তবে চলে যাও আর তোমার যা আছে বিক্রি কর এবং গরিবদের দান কর তাতে স্বর্গে ধন পাবে আর এস আমাকে অনুসরণ কর 22 কিন্তু এই কথা শুনে সেই যুবক দুঃখিত হয়ে চলে গেল কারণ তার অনেক সম্পত্তি ছিল 23 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি ধনীদের পক্ষে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা খুবই কঠিন 24 আবার তোমাদের বলছি ঈশ্বরের রাজ্যে একজন ধনীর প্রবেশ করার থেকে বরং ছুঁচের ছিদ্র দিয়ে উটের যাওয়া সহজ 25 এই কথা শুনে শিষ্যেরা খুবই আশ্চর্য্য হলেন বললেন তবে কে পাপের পরিত্রাণ পেতে পারে 26 যীশু তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন যা মানুষের কাছে অসম্ভব কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সবই সম্ভব 27 তখন পিতর এর উত্তরে তাঁকে বললেন দেখুন আমরা সব কিছুই ত্যাগ করে আপনার অনুসরণকারী হয়েছি আমরা তবে কি পাব 28 যীশু তাদের বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি তোমরা যতজন আমার অনুসরণকারী হয়েছ আবার যখন সব কিছু নতুন করে সৃষ্টি হবে যখন মানবপুত্র তাঁর মহিমার সিংহাসনে বসবেন তখন তোমরাও বারোটা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে 29 আর যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাড়ি কি ভাই কি বোন কি বাবা কি মা কি সন্তান কি জমি ত্যাগ করেছে সে তার একশোগুন পাবে এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হবে 30 কিন্তু অনেকে এমন লোক যারা প্রথম তারা শেষে পড়বে এবং যারা শেষের এমন অনেক লোক তারা প্রথম হবে
Chapter 20
আঙ্গুর বাগানের মজুরদের দৃষ্টান্ত।
1 কারণ স্বর্গরাজ্য এমন একজন জমির মালিকের মতো যিনি সকালে তাঁর আঙুরের ক্ষেতে মজুর নিযুক্ত করার জন্য বাইরে গেলেন 2 তিনি মজুরদের দিনে এক দিনের মজুরির সমান বেতন দেবেন বলে স্থির করে তাদের তাঁর আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ করার জন্য পাঠালেন 3 পরে তিনি সকাল নটার সময়ে বাইরে গিয়ে দেখলেন অন্য কয়েক জন বাজারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে 4 তিনি তাদের বললেন তোমরাও আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ করতে যাও যা ন্যায্য মজুরী তা তোমাদের দেব তাতে তারা গেল 5 আবার তিনি বারোটা ও বিকাল তিনটের সময়েও বাইরে গিয়ে তেমন করলেন 6 পরে বিকেল পাঁচটি র সময়ে বাইরে গিয়ে আর কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন আর তাদের বললেন কিজন্য সমস্ত দিন এখানে কোন জায়গায় কাজ না করে এখানে দাঁড়িয়ে আছ 7 তারা তাঁকে বলল কেউই আমাদেরকে কাজে লাগায় নি তিনি তাদের বললেন তোমরাও আঙ্গুর ক্ষেতে যাও 8 পরে সন্ধ্যা হলে সেই আঙ্গুর ক্ষেতের মালিক তাঁর কর্মচারীকে বললেন মজুরদের ডেকে মজুরী দাও শেষজন থেকে আরম্ভ করে প্রথমজন পর্যন্ত দাও 9 তাতে যারা বিকেল পাঁচটি র সময়ে কাজে লেগেছিল তারা এসে এক একজন এক দিনের করে মজুরী পেল 10 যারা প্রথমে কাজে লেগেছিল তারা এসে মনে করল আমরা বেশি পাব কিন্তু তারাও একদিনের মজুরী পেল 11 এবং তারা সেই জমির মালিকের বিরুদ্ধে বচসা করে বলতে লাগল 12 শেষের এরা তো এক ঘন্টা মাত্র খেটেছে আমরা সমস্ত দিন খেটেছি ও রোদে পুড়েছি আপনি এদেরকে আমাদের সমান মজুরী দিলেন 13 তিনি এর উত্তরে তাদের এক জনকে বললেন বন্ধু আমি তোমার প্রতি কিছু অন্যায় করিনি তুমি কি আমার কাছে এক দিনের মজুরীতে কাজ করতে রাজি হওনি 14 তোমার যা পাওনা তা নিয়ে চলে যাও আমার ইচ্ছা তোমাকে যা ঐ শেষের জনকেও তাই দেব 15 আমার নিজের যা তা নিজের ইচ্ছামত ব্যবহার করার কি আমার উচিত নয় না আমি দয়ালু বলে তোমার হিংসা হচ্ছে 16 এইভাবেই যারা শেষের তারা প্রথম হবে এবং যারা প্রথম তারা শেষে পড়বে 17 পরে যখন যীশু যিরূশালেম যাওয়ার জন্য তৈরী হলেন তখন তিনি সেই বারো জন শিষ্যকে এক পাশে ডেকে নিয়ে গেলেন এবং রাস্তায় তাঁদের বললেন 18 দেখ আমরা যিরুশালেমে যাচ্ছি আর মানবপুত্র প্রধান যাজকদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের হাতে সমর্পিত হবেন তারা তাঁকে মৃত্যুদন্ডের জন্য দোষী করবে 19 এবং ঠাট্টা করার জন্য চাবুক মারার ও ক্রুশে দেওয়ার জন্য অইহূদিদের হাতে তাঁকে তুলে দেবে পরে তিনি তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন 20 তখন সিবদিয়ের স্ত্রী তাঁর দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাছে এসে নমস্কার করে তাঁর কাছে কিছু চাইলেন 21 তিনি তাঁকে বললেন তুমি কি চাও তিনি বললেন আদেশ করুন যেন আপনার রাজ্যে আমার এই দুই ছেলের একজন আপনার ডান দিকে আর একজন বাম দিকে বসতে পারে 22 কিন্তু যীশু এর উত্তরে বললেন তোমরা কি চাইছ তা বোঝ না আমি যে পাত্রে পান করতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা পান করতে পার তাঁরা বললেন পারি 23 তিনি তাঁদের বললেন যদিও তোমরা আমার পাত্রে পান করবে কিন্তু যাদের জন্য আমার পিতা স্থান প্রস্তুত করে রেখেছেন তারা ছাড়া আর কাউকেই আমার ডান পাশে ও বাঁ পাশে বসানোর অধিকার আমার নেই 24 এই কথা শুনে অন্য দশ জন শিষ্য ঐ দুই ভাইয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন 25 কিন্তু যীশু তাঁদের কাছে ডেকে বললেন তোমরা জান অইহূদি জাতির তত্ত্বাবধায়ক তাদের উপরে রাজত্ব করে এবং যারা মহান তারা তাদের উপরে কর্তৃত্ব করে 26 তোমাদের মধ্যে তেমন হবে না কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে কেউ মহান হতে চায় সে তোমাদের মধ্য সেবক হবে 27 এবং তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রধান হতে চায় সে তোমাদের দাস হবে 28 যেমন মানবপুত্র সেবা পেতে আসেননি কিন্তু সেবা করতে এসেছে এবং মানুষের জন্য নিজের জীবন মুক্তির মূল্য হিসাবে দিতে এসেছেন 29 পরে যিরীহো থেকে যীশু এবং তাঁর শিষ্যদের বের হওয়ার সময়ে অনেক লোক তাঁকে অনুসরণ করল 30 আর দেখ দুই জন অন্ধ পথের পাশে বসেছিল সেই পথ দিয়ে যীশু যাচ্ছেন শুনে তারা চিত্কার করে বলল প্রভু দায়ূদসন্তান আমাদের প্রতি দয়া করুন 31 তাতে লোকেরা চুপ চুপ বলে তাদের ধমক দিল কিন্তু তারা আরও জোরে চিত্কার করে বলল প্রভু দায়ূদসন্তান আমাদের প্রতি দয়া করুন 32 তখন যীশু থেমে তাদের ডাকলেন আর বললেন তোমরা কি চাও আমি তোমাদের জন্য কি করব 33 তারা তাঁকে বলল প্রভু আমাদের চোখ যেন ঠিক হয়ে যায় 34 তখন যীশুর করুণা হল এবং তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করলেন আর তখনই তারা দেখতে পেল ও তাঁর পেছন পেছন চলল
Chapter 21
যীশুর রাজকীয় প্রবেশ।
1 পরে যখন তাঁরা যিরূশালেমের কাছে জৈতুন পাহাড়ে বৈৎফগী গ্রামে এলেন তখন যীশু দুই জন শিষ্যকে পাঠিয়ে দিলেন 2 তাঁদের বললেন তোমরা সামনের ঐ গ্রামে যাও আর সেখানে গিয়ে দেখতে পাবে একটি গর্দ্দভী বাঁধা আছে আর তার সঙ্গে একটি বাচ্চা তাদের খুলে আমার কাছে আন 3 আর যদি কেউ তোমাদের কিছু বলে তবে বলবে এদেরকে প্রভুর প্রয়োজন আছে তাতে সে তখনই তাদের পাঠিয়ে দেবে 4 এমনটি হল যেন এর দ্বারা ভাববাদীর ভাববাণী পূর্ণ হয় 5 তোমরা সিয়োনকন্যাকে বল দেখ তোমার রাজা তোমার কাছে আসছেন তিনি নম্র ও গর্দ্দভশাবকের উপরে বসে আসছেন 6 পরে ঐ শিষ্যেরা গিয়ে যীশুর আদেশ অনুযায়ী কাজ করলেন 7 গর্দ্দভীকে ও শাবকটিকে আনলেন এবং তাদের উপরে নিজেদের বস্ত্র পেতে দিলেন আর তিনি তাদের উপরে বসলেন 8 আর ভিড়ের মধ্য অধিকাংশ লোক নিজের নিজের কাপড় রাস্তায় পেতে দিল এবং অন্য অন্য লোকেরা গাছের ডাল কেটে রাস্তায় ছড়িয়ে দিল 9 আর যে সমস্ত লোক তাঁর আগে ও পিছনে যাচ্ছিল তারা চিত্কার করে বলতে লাগল হোশান্না দায়ূদসন্তান ধন্য যিনি প্রভুর নামে আসছেন স্বর্গেও হোশান্না 10 আর তিনি যিরূশালেমে প্রবেশ করলে সারা শহরে কোলাহল সৃষ্টি হয়ে গেল সবাই বলল উনি কে 11 তাতে লোকেরা বলল উনি সেই ভাববাদী গালীলের নাসরতীয় যীশু 12 পরে যীশু ঈশ্বরের উপাসনা গৃহে প্রবেশ করলেন এবং যত লোক মন্দিরে কেনা বেচা করছিল সেই সবাইকে বের করে দিলেন এবং যারা টাকা বদল করার জন্য টেবিল সাজিয়ে বসেছিল ও যারা পায়রা বিক্রি করছিল তাদের সব কিছু উল্টিয়ে ফেললেন 13 আর তাদের বললেন লেখা আছে আমার ঘরকে প্রার্থনার ঘর বলা হবে কিন্তু তোমরা এটাকে ডাকাতদের গুহায় পরিণত করেছো 14 পরে অন্ধেরা ও খোঁড়ারা মন্দিরে তাঁর কাছে এলো আর তিনি তাদের সুস্থ করলেন 15 কিন্তু প্রধান যাজকগণ ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা তাঁর সমস্ত আশ্চর্য্য কাজ দেখে এবং যে ছেলেমেয়েরা হোশান্না দায়ূদসন্তান বলে মন্দিরে চিত্কার করছিল তাদের দেখে রেগে গেল 16 এবং তাঁকে বলল শুনছ এরা কি বলছে যীশু তাদের বললেন হ্যাঁ তোমরা কি কখনও পড়নি যে তুমি ছোট শিশু ও দুধ খাওয়া বাচ্চার মুখ থেকে প্রশংসার ব্যবস্থা করেছ 17 পরে তিনি তাদের ছেড়ে শহরের বাইরে বৈথনিয়ায় গেলেন আর সেই জায়গায় রাতে থাকলেন 18 সকালে শহরে ফিরে আসার সময় তাঁর খিদে পেল 19 রাস্তার পাশে একটি ডুমুরগাছ দেখে তিনি তার কাছে গেলেন এবং পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না তখন তিনি গাছটিকে বললেন আর কখনও তোমাতে ফল না ধরুক আর হঠাৎ সেই ডুমুরগাছটা শুকিয়ে গেল 20 তা দেখে শিষ্যেরা আশ্চর্য্য হয়ে বললেন ডুমুরগাছটা হঠাৎ শুকিয়ে গেল কিভাবে 21 যীশু এর উত্তরে তাঁদের বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আর সন্দেহ না কর তবে তোমরা খালি ডুমুরগাছের প্রতি এমন করতে পারবে তা নয় কিন্তু এই পাহাড়কেও যদি বল উপড়িয়ে যাও আর সমুদ্রে গিয়ে পড় তাই হবে 22 আর তোমরা প্রার্থনায় বিশ্বাসের সঙ্গে যা কিছু চাইবে সে সব কিছু পাবে 23 পরে যীশু মন্দিরে এলেন এবং যখন তিনি উপদেশ দিচ্ছিলেন সে সময়ে প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনেরা তাঁর কাছে এসে বলল তুমি কোন ক্ষমতায় এই সব করছ আর কেই বা তোমাকে এই ক্ষমতা দিয়েছে 24 যীশু উত্তরে তাদের বললেন আমিও তোমাদের একটি কথা জিজ্ঞাসা করব যদি তোমরা আমাকে উত্তর দাও তা হলে আমি তোমাদের বলবো কোন ক্ষমতায় এসব করছি 25 যোহনের বাপ্তিষ্ম কোথা থেকে হয়েছিল স্বর্গরাজ্য থেকে না মানুষের থেকে তখন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল যদি বলি স্বর্গ থেকে তাহলে এ আমাদেরকে বলবে তবে তোমরা তাঁকে বিশ্বাস কর নি কেন 26 আর যদি বলি মানুষের মাধ্যমে লোকদের থেকে আমার ভয় আছে কারণ সবাই যোহনকে ভাববাদী বলে মানে 27 তখন তারা যীশুকে বলল আমরা জানি না তিনিও তাদের বললেন তবে আমিও কি ক্ষমতায় এসব করছি তা তোমাদের বলব না 28 কিন্তু তোমরা কি মনে কর এক ব্যক্তির দুটি ছেলে ছিল তিনি প্রথম জনের কাছে গিয়ে বললেন পুত্র যাও আজ আঙ্গুর ক্ষেতে কাজ কর 29 সে বলল আমি যাব না কিন্তু পরে মন পরিবর্তন করে গেল 30 পরে তিনি দ্বিতীয় জনের কাছে গিয়ে তেমনি বললেন সে বলল বাবা আমি যাচ্ছি কিন্তু গেল না 31 সেই দুইজনের মধ্যে কে বাবার ইচ্ছা পালন করল তারা বলল প্রথম জন যীশু তাদের বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি কর আদায়কারীরাও বেশ্যারা তোমাদের আগে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করছে 32 কারণ যোহন ধার্মিকতার পথ দিয়ে তোমাদের কাছে এলেন আর তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করলে না কিন্তু কর আদায়কারীরাও বেশ্যারা তাঁকে বিশ্বাস করল আর তোমরা তা দেখেও এই রকম মন পরিবর্তন করলে না যে তাঁকে বিশ্বাস করবে 33 অন্য আর একটি গল্প শোন একজন আঙুর ক্ষেতের মালিক ছিলেন তিনি আঙুর ক্ষেত করে তার চারিদিকে বেড়া দিলেন ও তার মধ্যে আঙুর রস বার করার জন্য একটা আঙুর মাড়াবার জন্য গর্ত খুঁড়লেন এবং দেখাশোনা করার জন্য উঁচু ঘর তৈরী করলেন পরে কৃষকদের হাতে তা জমা দিয়ে অন্য দেশে চলে গেলেন 34 আর ফল পাবার সময় কাছে এলে তিনি তাঁর ফল সংগ্রহ করার জন্য কৃষকদের কাছে তাঁর দাসদেরকে পাঠালেন 35 তখন কৃষকেরা তাঁর দাসদেরকে ধরে কাউকে মারলো কাউকে হত্যা করল কাউকে পাথর মারল 36 আবার তিনি আগের থেকে আরও অনেক দাসকে পাঠালেন তাদের সঙ্গেও তারা সেই রকম ব্যবহার করল 37 অবশেষে তিনি তাঁর ছেলেকে তাদের কাছে পাঠালেন বললেন তারা আমার ছেলেকে সম্মান করবে 38 কিন্তু কৃষকেরা মালিকের ছেলেকে দেখে বলল এই ব্যক্তিই উত্তরাধিকারী এসো আমরা একে মেরে ফেলে এর উত্তরাধিকার কেড়ে নিই 39 পরে তারা তাঁকে ধরে আঙ্গুর ক্ষেতের বাইরে ফেলে বধ করল 40 অতএব আঙুর ক্ষেতের মালিক যখন আসবেন তখন সেই চাষীদের কে কি করবেন 41 তারা তাঁকে বলল মালিক সেই মন্দ লোকেদেরও একেবারে ধ্বংস করবেন এবং সেই ক্ষেত এমন অন্য কৃষকদেরকে জমা দেবেন যারা ফলের সময়ে তাঁকে ফল দেবে 42 যীশু তাদের বললেন তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পড়নি যে পাথরটাকে মিস্ত্রীরা অগ্রাহ্য করেছিল সেই পাথরটাই কোণের প্রধান পাথর হয়ে উঠল প্রভু ঈশ্বর এই কাজ করেছেন আর এটা আমাদের চোখে সত্যিই খুব আশ্চর্য্য কাজ 43 এই জন্য আমি তোমাদের বলছি তোমাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের রাজ্য কেড়ে নাও য়া যাবে এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হবে যে জাতি তার ফল দেবে 44 আর এই পাথরের উপরে যে পড়বে সে ভগ্ন হবে কিন্তু এই পাথর যার উপরে পড়বে তাকে চূরমার করে ফেলবে 45 তাঁর এই সব গল্প শুনে প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা বুঝল যে তিনি তাদেরই বিষয় বলছেন 46 আর তারা যীশুকে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু তারা জনগণকে ভয় পেলো কারণ লোকে তাঁকে ভাববাদী বলে মানত
Chapter 22
বিয়ের ভোজের গল্প।
1 যীশু আবার গল্পের মাধ্যমে কথা বললেন তিনি তাদের বললেন 2 স্বর্গরাজ্য এমন একজন রাজার মতো যিনি তাঁর ছেলের বিয়ের ভোজ আয়োজন করলেন 3 সেই ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের ডাকার জন্য তিনি তাঁর দাসদের পাঠালেন কিন্তু লোকেরা আসতে চাইল না 4 তাতে তিনি আবার অন্য দাসদের পাঠালেন বললেন নিমন্ত্রিত লোকদেরকে বল দেখ আমার ভোজ প্রস্তুত করেছি আমার অনেক বলদ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু সব মারা হয়েছে সব কিছুই প্রস্তুত তোমরা বিয়ের ভোজে এসো 5 কিন্তু তারা অবহেলা করে কেউ তার ক্ষেতে কেউ বা তার নিজের কাজে চলে গেল 6 অবশিষ্ট সবাই তাঁর দাসদের ধরে অপমান করল ও বধ করল 7 তাতে রাজা প্রচন্ড রেগে গেলেন এবং সৈন্যসামন্ত পাঠিয়ে সেই হত্যাকারীদের ধ্বংস করলেন ও তাদের শহর পুড়িয়ে দিলেন 8 পরে তিনি তাঁর দাসদের বললেন বিয়ের ভোজ তো প্রস্তুত কিন্তু ঐ নিমন্ত্রিত লোকেরা এর যোগ্য ছিল না 9 অতএব তোমরা রাজপথের মাথায় মাথায় গিয়ে যত লোকের দেখা পাও সবাইকে বিয়ের ভোজে ডেকে আন 10 তাতে ঐ দাসেরা রাজপথে গিয়ে ভাল মন্দ যত লোকের দেখা পেল সবাইকেই সংগ্রহ করে আনল তাতে বিয়ে বাড়ি অতিথিতে পরিপূর্ণ হল 11 পরে রাজা অতিথিদের দেখার জন্যে ভিতরে এসে এমন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যার গায়ে বিয়ে বাড়ির পোশাক ছিল না 12 তিনি তাকে বললেন হে বন্ধু তুমি কেমন করে বিয়ে বাড়ির পোশাক ছাড়া এখানে প্রবেশ করলে সে উত্তর দিতে পারল না 13 তখন রাজা তাঁর চাকরদের বললেন ওর হাত পা বেঁধে ওকে বাইরে অন্ধকারে ফেলে দাও সেখানে লোকেরা কাঁদবে ও দাঁতে দাঁত ঘষবে 14 যদিও অনেককেই ডাকা হয়েছে কিন্তু অল্পই মনোনীত 15 তখন ফরীশীরা গিয়ে পরিকল্পনা করল কিভাবে তাঁকে কথার ফাঁদে ফেলা যায় 16 আর তারা হেরোদীয়দের সঙ্গে তাদের শিষ্যদের দিয়ে তাঁকে বলে পাঠাল গুরু আমরা জানি আপনি সত্যবাদী এবং সঠিক ভাবে ঈশ্বরের পথের বিষয় শিক্ষা দিচ্ছেন এবং আপনি কাউকে ভয় পাননা কারণ আপনি লোকেরা কে কি বলল সে কথায় বিচার করবেন না 17 ভাল আমাদের বলুন আপনার মত কি কৈসরকে কর দেওয়া উচিত কি না 18 কিন্তু যীশু তাদের ফাঁদ বুঝতে পেরে বললেন ভণ্ডরা আমার পরীক্ষা কেন করছ 19 সেই করের পয়সা আমাকে দেখাও তখন তারা তাঁর কাছে একটি দিনার আনল 20 তিনি তাদের বললেন এই মূর্তি ও এই নাম কার তারা বলল কৈসরের 21 তখন তিনি তাদের বললেন তবে কৈসরের যা কিছু তা কৈসরকে দাও আর ঈশ্বরের যা কিছু তা ঈশ্বরকে দাও 22 এই কথা শুনে তারা আশ্চর্য্য হল এবং তাঁর কাছ থেকে চলে গেল 23 সেই দিন সদ্দূকীরা যারা বলে মৃত্যু থেকে জীবিত হয় না তারা তাঁর কাছে এলো 24 এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করল গুরু মোশি বললেন কেউ যদি সন্তান ছাড়া মারা যায় তবে তার ভাই তার স্ত্রীকে বিয়ে করে তার ভাইয়ের জন্য বংশ রক্ষা করবে 25 ভাল আমাদের মধ্যে কোনো একটি পরিবারে সাতটি ভাই ছিল প্রথম জন বিয়ের পর মারা গেল এবং সন্তান না হওয়ায় তার ভাইয়ের জন্য নিজের স্ত্রীকে রেখে গেল 26 এইভাবেই দ্বিতীয় জন তৃতীয় জন করে সাত জনই তাকে বিয়ে করল 27 সবার শেষে সেই স্ত্রীও মরে গেল 28 অতএব মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার সময় ঐ সাত জনের মধ্যে সে কার স্ত্রী হবে সবাই তো তাকে বিয়ে করেছিল 29 যীশু এর উত্তরে তাদের বললেন তোমরা ভুল বুঝছ কারণ তোমরা না জান শাস্ত্র না জান ঈশ্বরের ক্ষমতা 30 কারণ মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে লোকে বিয়ে করে না এবং তাদের বিয়ের দেওয়াও হয় না বরং স্বর্গে ঈশ্বরের দূতদের মতো থাকে 31 কিন্তু মৃতদের মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার বিষয়ে ঈশ্বর তোমাদের যা বলেছেন তা কি তোমরা শাস্ত্রে পড়নি 32 তিনি বলেন আমি অব্রাহামের ঈশ্বর ইসহাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর এই লোকগুলি মৃত্যুর অনেক পরে ঈশ্বর এই কথাগুলি বলেছেন ঈশ্বর মৃতদের নন কিন্তু জীবিতদের 33 এই কথা শুনে লোকেরা তাঁর শিক্ষাতে অবাক হয়ে গেল 34 ফরীশীরা যখন শুনতে পেল তিনি সদ্দূকীদের নিরুত্তর করেছেন তখন তারা একসঙ্গে এসে জুটল 35 আর তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি একজন ব্যবস্থার গুরু পরীক্ষা করার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসা করল 36 গুরু ব্যবস্থার মধ্যে কোন আদেশটি মহান 37 তিনি তাকে বললেন তোমার সমস্ত হৃদয় তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে ভালবাসবে 38 এটা মহান ও প্রথম আদেশ 39 আর দ্বিতীয় আদেশটি হলো তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে 40 এই দুটি আদেশেই সমস্ত ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের বই নির্ভর করে 41 আর ফরীশীরা একত্র হলে যীশু তাদের জিজ্ঞাসা করলেন 42 খ্রীষ্টের বিষয়ে তোমাদের কি মনে হয় তিনি কার সন্তান তারা বলল দায়ূদের 43 তিনি তাদের বললেন তবে দায়ূদ কিভাবে আত্মার আবেশে তাঁকে প্রভু বলেন তিনি বলেন 44 প্রভু আমার প্রভুকে বললেন তুমি আমার ডান পাশে বস যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদেরকে তোমার পা রাখার জায়গায় পরিণত করি 45 অতএব দায়ূদ যখন তাঁকে প্রভু বলেন তখন তিনি কিভাবে তাঁর সন্তান 46 তখন কেউ তাঁকে কোন উত্তর দিতে পারল না আর সেই দিন থেকে তাঁকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করতে কারও সাহস হল না
Chapter 23
ফরীশীদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের প্রতি যীশুর অনুযোগ।
1 তখন যীশু লোকদের ও তাঁর শিষ্যদের বললেন 2 ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা মোশির আসনে বসেন 3 অতএব তাঁরা তোমাদের যা কিছু করতে বললেন তা পালন করবে এবং তা মেনে চলবে কিন্তু তাদের কাজের মতো কাজ করবে না কারণ তারা যা বলে তারা নিজেরা সেগুলো করে না 4 তারা ভারী ও কঠিন বোঝা বেঁধে লোকদের কাঁধে চাপিয়ে দেয় কিন্তু নিজেরা আঙ্গুল দিয়েও তা সরাতে চায় না 5 তারা লোককে দেখানোর জন্যই তাদের সমস্ত কাজ করে তারা নিজেদের জন্য শাস্ত্রের বাক্য লেখা বড় কবচ তৈরী করে এবং বস্ত্রের ঝালর বড় করে 6 আর ভোজে প্রধান স্থান সমাজঘরে প্রধান প্রধান আসন তারা ভালবাসে 7 হাটে বাজারে শুভেচ্ছা জানায় এবং লোকের কাছে রব্বি গুরু বলে সম্মান সূচক অভিবাদন পেতে খুব ভালবাসে 8 কিন্তু তোমরা শিক্ষক বলে সম্ভাষিত হয়ো না কারণ তোমাদের গুরু একজন এবং তোমরা সবাই তার ভাই 9 আর পৃথিবীতে কাউকেও পিতা বলে ডেকো না কারণ তোমাদের পিতা একজন যিনি স্বর্গে থাকেন 10 তোমরা শিক্ষক বলে সম্ভাষিত হয়ো না কারণ তোমাদের গুরু একজন তিনি খ্রীষ্ট 11 কিন্তু তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ সে তোমাদের সেবক হবে 12 আর যে কেউ নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে আর যে কেউ নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে 13 কিন্তু ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ তোমরা লোকেদের জন্য স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে থাক 14 নিজেরাও তাতে প্রবেশ কর না এবং যারা প্রবেশ করতে আসে, তাদের ও প্রবেশ করতে দাও না। 15 ধর্মশিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ এক জনকে ইহূদি ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্য তোমরা সমুদ্রে ও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে থাক আর যখন কেউ হয় তখন তাকে তোমাদের থেকেও দ্বিগুন নরকের যোগ্য করে তোলো 16 অন্ধ পথ পরিচালনাকারীরা ধিক তোমাদের তোমরা বলে থাক কেউ মন্দিরের দিব্যি করে তা পালন না করলে তা কিছুই নয় কিন্তু কেউ মন্দিরের সোনার দিব্যি করলে তাতে সে আবদ্ধ হল 17 তোমরা মূর্খেরা ও অন্ধেরা বল দেখি কোনটি শ্রেষ্ঠ সোনা না সেই মন্দির যা সেই সোনাকে পবিত্র করেছে 18 আরও বলে থাক কেউ যজ্ঞবেদির দিব্যি করলে তা কিছুই নয় কিন্তু কেউ যদি তার উপরের উপহারের দিব্যি করে তবে সে তার দিব্যিতে আবদ্ধ হল 19 তোমরা অন্ধেরা বল দেখি কোনটি শ্রেষ্ঠ উপহার না সেই যজ্ঞবেদি যা উপহারকে পবিত্র করে 20 যে ব্যক্তি যজ্ঞবেদির দিব্যি করে সে তো বেদির ও তার উপরের সবকিছুরই দিব্যি করে 21 আর যে মন্দিরের দিব্যি করে সে মন্দিরের যিনি সেখানে বাস করেন তাঁরও দিব্যি করে 22 আর যে স্বর্গের দিব্যি করে সে ঈশ্বরের সিংহাসনের এবং যিনি তাতে বসে আছেন তাঁরও দিব্যি করে 23 ধর্মশিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ তোমরা পুদিনা মৌরি ও জিরার দশমাংশ দিয়ে থাক আর ব্যবস্থার মধ্যে প্রধান বিষয় ন্যায়বিচার দয়া ও বিশ্বাস ত্যাগ করেছ কিন্তু এ সব পালন করা এবং ঐ গুলিও ত্যাগ না করা তোমাদের উচিত ছিল 24 অন্ধ পথ পরিচালনাকারীরা তোমরা মশা ছেঁকে ফেল কিন্তু উট গিলে খাও 25 ধর্মশিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ তোমরা পান করার পাত্র ও খাওয়ার পাত্রের বাইরে পরিষ্কার করে থাক কিন্তু সেগুলির ভেতরে দৌরাত্ম্য ও অন্যায়ে ভরা 26 অন্ধ ফরীশী আগে পান পাত্রের ও খাওয়ার পাত্রের ভেতরেও পরিষ্কার কর যেন তা বাইরেও পরিষ্কার হয় 27 ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ তোমরা চুনকাম করা কবরের মতো যা বাইরে দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু ভেতরে মরা মানুষের হাড় ও সব রকমের অশুচিতায় ভরা 28 একইভাবে তোমরাও বাইরে লোকদের কাছে নিজেদের ধার্মিক বলে দেখিয়ে থাক কিন্তু ভিতরে তোমরা ভণ্ড ও পাপে পরিপূর্ণ 29 ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও ফরীশীরা হে ভণ্ডরা ধিক তোমাদের কারণ তোমরা ভাববাদীদের কবর গেঁথে থাক এবং ধার্মিকদের সমাধি স্তম্ভ সাজিয়ে থাক আর তোমরা বল 30 আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে থাকতাম তবে আমরা ভাববাদীদের রক্তপাতে তাঁদের সহভাগী হতাম না 31 অতএব তোমরা নিজেদের বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিচ্ছ যে যারা ভাববাদীদের বধ করেছিল তোমরা তাদেরই সন্তান 32 তোমরাও তোমাদের পূর্বপুরুষদের পাপের পরিমাণ পূর্ণ করছ 33 হে সাপের দল কালসাপের বংশেরা তোমরা কেমন করে বিচারে নরকদন্ড এড়াবে 34 অতএব দেখ আমি তোমাদের কাছে ভাববাদী জ্ঞানবান ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের পাঠাব তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে তোমরা বধ করবে ও ক্রুশে দেবে কয়েকজনকে তোমাদের সমাজঘরে চাবুক মারবে এবং এক শহর থেকে আর এক শহরে তাড়া করবে 35 যেন পৃথিবীতে যত ধার্মিক লোকের রক্তপাত হয়ে আসছে সে সমস্তর দন্ড তোমাদের উপরে আসে সেই ধার্মিক হেবলের রক্তপাত থেকে বরখিয়ের ছেলে যে সখরিয়কে তোমরা ঈশ্বরের মন্দিরের ও যজ্ঞবেদির মাঝখানে বধ করেছিলে তাঁর রক্তপাত পর্যন্ত 36 আমি তোমাদের সত্যি বলছি এই যুগের লোকদের উপরে এসমস্ত দন্ড আসবে 37 যিরূশালেম যিরূশালেম তুমি ভাববাদীদেরকে বধ করেছ ও তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয় তাদের তোমরা পাথর মেরে থাক মুরগি যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নীচে একত্র করে তেমন আমিও কত বার তোমার সন্তানদের একত্র করতে ইচ্ছা করেছি কিন্তু তোমরা রাজি হলে না 38 দেখ তোমাদের বাড়ি তোমাদের জন্য খালি হয়ে পড়ে থাকবে 39 কারণ আমি তোমাদের বলছি তোমরা এখন থেকে আমাকে আর দেখতে পাবে না যত দিন পর্যন্ত তোমরা না বলবে ধন্য তিনি যিনি প্রভুর নামে আসছেন
Chapter 24
যিরূশালেমের ধ্বংস ও যীশু আবার ফিরে আসবেন সে বিষয়ে ভাববাণী।
1 পরে যীশু ঈশ্বরের গৃহ থেকে বের হয়ে নিজের রাস্তায় চলেছেন এমন সময়ে তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে মন্দিরের গাঁথনিগুলি দেখানোর জন্য কাছে গেলেন 2 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন তোমরা কি এই সব দেখছ না আমি তোমাদের সত্যি বলছি এই মন্দিরের একটা পাথর অন্য পাথরের উপরে থাকবে না সব কিছুই ধ্বংস হবে 3 পরে তিনি জৈতুন পর্বতের উপরে বসলে শিষ্যেরা গোপনে তাঁর কাছে এসে বললেন আমাদেরকে বলুন দেখি এই সব ঘটনা কখন ঘটবে আর আপনার আবার ফিরে আসার এবং যুগ শেষ হওয়ার চিহ্ন কি 4 যীশু এর উত্তরে তাঁদের বললেন সাবধান হও কেউ যেন তোমাদের না ঠকায় 5 কারণ অনেকেই আমার নাম ধরে আসবে বলবে আমিই সেই খ্রীষ্ট আর অনেক লোককে ঠকাবে 6 আর তোমরা যুদ্ধের কথাও যুদ্ধের গুজব শুনবে দেখো অস্থির হয়ো না কারণ এসব অবশ্যই ঘটবে কিন্তু তখনও এর শেষ নয় 7 কারণ এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে ও এক রাজ্যে অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে উঠবে জায়গায় জায়গায় ভূমিকম্প ও দূর্ভিক্ষ হবে 8 কিন্তু এই সবই যন্ত্রণা আরম্ভ মাত্র 9 সেই সময়ে লোকেরা কষ্ট দেবার জন্য তোমাদের সমর্পণ করবে ও তোমাদের বধ করবে আর আমার নামের জন্য সমস্ত জাতি তোমাদের ঘৃণা করবে 10 আর সেই সময় অনেকে বিশ্বাস ছেড়ে চলে যাবে একজন অন্য জনকে শত্রুর হাতে সমর্পণ করবে একে অন্যকে ঘৃণা করবে 11 আর অনেক ভণ্ড ভাববাদী আসবে এবং অনেককে ভোলাবে 12 আর অধর্ম বৃদ্ধি হওয়াতে অধিকাংশ লোকের প্রেম শীতল হয়ে যাবে 13 কিন্তু যে কেউ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে সে উদ্ধার পাবে 14 আবার সব জাতির কাছে সাক্ষ্য দাওয়ার জন্য রাজ্যের এই সুসমাচার সমস্ত জগতে প্রচার করা হবে আর তখন শেষ সময় উপস্থিত হবে 15 অতএব যখন তোমরা দেখবে ধ্বংসের যে ঘৃণার জিনিসের বিষয়ে দানিয়েল ভাববাদী বলেছেন যা পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে আছে যে ব্যক্তি এই বিষয়ে পড়ে সে বুঝুক 16 তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকে তারা পাহাড়ি অঞ্চলে পালিয়ে যাক 17 যে কেউ ছাদের উপরে থাকে সে ঘর থেকে জিনিসপত্র নাওয়ার জন্য নীচে না নামুক 18 আর যে কেউ ক্ষেতে থাকে সে তার পোশাক নাওয়ার জন্য পেছনে ফিরে না যাক 19 হায় সেই সময়ে গর্ভবতী এবং যাদের কোলে দুধের বাচ্চা তাদের খুবই কষ্ট হবে 20 আর প্রার্থনা কর যেন তোমাদের শীতকালে কিম্বা বিশ্রামবারে পালাতে না হয় 21 কারণ সেসময় এমন মহাসংকট উপস্থিত হবে যা জগতের আরম্ভ থেকে এ পর্যন্ত কখনও হয়নি আর কখনও হবেও না 22 আর সেই দিনের সংখ্যা যদি কমিয়ে দেওয়া না হত তবে কোন মানুষই উদ্ধার পেত না কিন্তু যারা মনোনীত তাদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হবে 23 তখন যদি কেউ তোমাদের বলে দেখ সেই খ্রীষ্ট এখানে কিম্বা ওখানে তোমরা বিশ্বাস কর না 24 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা ও ভণ্ড ভাববাদীরা উঠবে এবং এমন মহান মহান চিহ্ন ও আশ্চর্য্য আশ্চর্য্য কাজ দেখাবে যে যদি হতে পারে তবে মনোনীতদেরও ভোলাবে 25 দেখ আমি আগেই তোমাদের বললাম 26 অতএব লোকে যদি তোমাদের বলে দেখ তিনি মরূপ্রান্তে তোমরা বাইরে যেও না দেখ তিনি গোপন ঘরে তোমরা বিশ্বাস করো না 27 কারণ বিদ্যুৎ যেমন পূর্ব দিক থেকে বের হয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রকাশ পায় তেমন ভাবেই মানবপুত্রের আগমনও হবে 28 যেখান মৃতদেহ থাকে সেইখানে শকুন জড়ো হবে 29 আর সেই সময়ের সংকটের পরেই সূর্য্য অন্ধকার হবে চাঁদও জ্যোৎস্না দেবে না আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে ও আকাশমন্ডলের সমস্ত ক্ষমতা 30 আর তখন মানবপুত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাবে আর তখন পৃথিবীর সমস্ত জাতি বিলাপ করবে এবং মানবপুত্রকে আকাশে মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসতে দেখবে 31 আর তিনি মহা তূরীধ্বনির সঙ্গে তাঁর দূতদের পাঠাবেন তাঁরা আকাশের এক সীমা থেকে আর এক সীমা পর্যন্ত চারদিক থেকে তাঁর মনোনীতদের একত্রিত করবেন 32 ডুমুরগাছের গল্প থেকে শিক্ষা নাও যখন তার ডালে কচি পাতা বের হয় তখন তোমরা জানতে পার গ্রীষ্মকাল এসে গেছে 33 তেমনি তোমরা ঐ সব ঘটনা দেখলেই জানবে তিনিও আসছেন এমনকি দরজার কাছে উপস্থিত 34 আমি তোমাদের সত্যি বলছি এই যুগের লোকদের লোপ হবে না যে পর্যন্ত না এ সমস্ত কিছু পূর্ণ হয় 35 আকাশের ও পৃথিবীর লোপ হবে কিন্তু আমার বাক্যের লোপ কখনও হবে না 36 কিন্তু সেই দিনের ও সেই মুহূর্তের বিষয় কেউই জানে না এমনকি স্বর্গ দূতেরাও জানে না পুত্রও জানে না শুধু পিতা জানেন 37 যেমন নোহের সময়ে হয়েছিল মানবপুত্রের আগমনও তেমন হবে 38 কারণ বন্যা আসার আগে থেকে জাহাজে নোহের প্রবেশের দিন পর্যন্ত লোকে যেমন খাওয়া দাওয়া করত বিয়ে করত ও বিয়ে দিয়েছে 39 এবং ততক্ষণ বুঝতে পারল না যতক্ষণ না বন্যা এসে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল তেমন মানবপুত্রের আগমনের সময়েও হবে 40 তখন দুই জন ক্ষেতে থাকবে এক জনকে নিয়ে নাওয়া হবে এবং অন্য জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে 41 দুটি মহিলা যাঁতা পিষবে এক জনকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং অন্য জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে 42 অতএব জেগে থাক কারণ তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসবেন তা তোমরা জান না 43 কিন্তু এটা জেনে রাখো চোর কোন মুহূর্তে আসবে তা যদি বাড়ির মালিক জানত তবে জেগে থাকত নিজের বাড়িতে সিঁধ কাটতে দিত না 44 এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক কারণ যে সময় তোমরা মনে করবে তিনি আসবেন না সেই সময়ই মানবপুত্র আসবেন 45 এখন সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে যাকে তার মালিক তাঁর পরিজনের উপরে নিযুক্ত করেছেন যেন সে তাদের উপযুক্ত সময়ে খাবার দেয় 46 ধন্য সেই দাস যাকে তার মালিক এসে তেমন করতে দেখবেন 47 আমি তোমাদের সত্যি বলছি তিনি তাকে তাঁর সব কিছুর উপরে নিযুক্ত করবেন 48 কিন্তু সেই দুষ্টু দাস যদি তার হৃদয়ে বলে আমার মালিকের আসবার দেরি আছে 49 আর যদি তার দাসদের মারতে এবং মাতাল লোকদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করতে আরম্ভ করে 50 তবে যে দিন সে অপেক্ষা করবে না এবং যে মুহূর্তের আশা সে করবে না সেই দিন ও সেই মুহূর্তে সেই দাসের মালিক আসবেন 51 আর তাকে দুই খন্ড করে ভণ্ডদের মধ্যে তার স্থান ঠিক করবেন সে সেই জায়গায় কাঁদবে ও দাঁতে দাঁত ঘষবে
Chapter 25
বিচার দিনের বিষয়ে উদাহরণ ও শিক্ষা।
1 তখন স্বর্গরাজ্য এমন দশটি কুমারীর মতো হবে যারা নিজের নিজের প্রদীপ নিয়ে বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বের হল 2 তাদের মধ্যে পাঁচ জন বোকা আর পাঁচ জন বুদ্ধিমতী ছিল 3 কারণ যারা বোকা ছিল তারা নিজের নিজের প্রদীপ নিল কিন্তু সঙ্গে তেল নিল না 4 কিন্তু যারা বুদ্ধিমতী তারা তাদের প্রদীপের সঙ্গে পাত্রে তেলও নিল 5 আর বড় আসতে দেরি হওয়ায় সবাই ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে পড়ল 6 পরে মাঝ রাতে এই আওয়াজ হল দেখ বর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বের হও 7 তাতে সেই কুমারীরা সবাই উঠল এবং নিজের নিজের প্রদীপ সাজালো 8 আর বোকা কুমারীরা বুদ্ধিমতিদের বলল তোমাদের তেল থেকে আমাদেরকে কিছু দাও কারণ আমাদের প্রদীপ নিভে যাচ্ছে 9 কিন্তু বুদ্ধিমতীরা বলল হয়তো তোমাদের ও আমাদের জন্য এই তেলে কুলাবে না তোমরা বরং বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে তোমাদের জন্য তেল কিনে নাও 10 তারা তেল কিনতে যাচ্ছে সেই সময় বর এলো এবং যারা তৈরী ছিল তারা তাঁর সঙ্গে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল 11 শেষে অন্য সমস্ত কুমারীরাও এলো এবং বলতে লাগল প্রভু প্রভু আমাদেরকে দরজা খুলে দিন 12 কিন্তু তিনি বললেন তোমাদের সত্যি বলছি আমি তোমাদের চিনি না 13 অতএব জেগে থাক কারণ তোমরা সেই দিন বা সেই মুহূর্ত জান না 14 এটা সেই রকম মনে কর যে কোন ব্যক্তি বিদেশে যাচ্ছেন তিনি তাঁর দাসদেরকে ডেকে তাঁর সম্পত্তি তাদের হাতে সমর্পণ করলেন 15 তিনি এক জনকে পাঁচ তালন্ত অন্য জনকে দুই তালন্ত এবং আর এক জনকে এক তালন্ত যার যেমন যোগ্যতা তাকে সেইভাবে দিলেন পরে বিদেশে চলে গেলেন 16 যে পাঁচ তালন্ত পেয়েছিল সে তখনই গেল তা দিয়ে ব্যবসা করল এবং আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করল 17 যে দুই তালন্ত পেয়েছিল সেও তেমন করে আরও দুই তালন্ত লাভ করল 18 কিন্তু যে এক তালন্ত পেয়েছিল সে গিয়ে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার মালিকের টাকা লুকিয়ে রাখল 19 অনেকদিন পরে সেই দাসদের মালিক এলো এবং তাদের কাছে হিসেব নিলেন 20 তখন যে পাঁচ তালন্ত পেয়েছিল সে এসে আরও পাঁচ তালন্ত এনে বলল মালিক আপনি আমার কাছে পাঁচ তালন্ত দিয়েছিলেন দেখুন তা দিয়ে আমি আরও পাঁচ তালন্ত লাভ করেছি 21 তার মালিক তাকে বললেন বেশ উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হয়েছ আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করব তুমি তোমার মালিকের আনন্দের সহভাগী হও 22 পরে যে দুই তালন্ত পেয়েছিল সেও এসে বলল মালিক আপনি আমার কাছে দুই তালন্ত দিয়েছিলেন দেখুন তা দিয়ে আমি আরও দুই তালন্ত লাভ করেছি 23 তার মালিক তাকে বললেন বেশ উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হয়েছ আমি তোমাকে অনেক বিষয়ের উপরে নিযুক্ত করব তুমি তোমার মালিকের আনন্দের সহভাগী হও 24 পরে যে এক তালন্ত পেয়েছিল সেও এসে বলল মালিক আমি জানতাম আপনি খুবই কঠিন লোক যেখানে বীজ রোপণ করেননি সেখানে ফসল কেটে থাকেন ও যেখানে বীজ ছড়ান নি সেখানে ফসল কুড়িয়ে থাকেন 25 তাই আমি ভয়ে আপনার তালন্ত মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম দেখুন আপনার যা ছিল তাই আপনি পেলেন 26 কিন্তু তার মালিক উত্তর করে তাকে বললেন দুষ্টু অলস দাস তুমি নাকি জানতে আমি যেখানে বুনিনা সেখানে কাটি এবং যেখানে ছড়াই না সেখানে কুড়াই 27 তবে মহাজনদের হাতে আমার টাকা রেখে দাওয়া তোমার উচিত ছিল তা করলে আমি এসে আমার যা তা সুদের সঙ্গে পেতাম 28 অতএব তোমরা এর কাছ থেকে ঐ তালন্ত নিয়ে নাও এবং যার দশ তালন্ত আছে তাকে দাও 29 কারণ যে ব্যক্তির কাছে আছে তাকে দাওয়া হবে তাতে তার আরো বেশি হবে কিন্তু যার নেই তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে নিয়ে নাওয়া হবে 30 আর তোমরা ঐ অনুপযোগী দাসকে বাইরের অন্ধকারে ফেলে দাও সেই জায়গায় সে কাঁদবে ও দাঁতে দাঁত ঘষবে 31 আর যখন মানবপুত্র সমস্ত দূতদের সঙ্গে নিয়ে নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি তাঁর প্রতাপের সিংহাসনে বসবেন 32 আর সমস্ত জাতি তাঁর সামনে জমায়েত হবে পরে তিনি তাদের একজন থেকে অন্য জনকে আলাদা করবেন যেমন পালরক্ষক ছাগলের পাল থেকে ভেড়া আলাদা করে 33 আর তিনি ভেড়াদের তাঁর ডানদিকে ও ছাগলদেরকে বাঁদিকে রাখবেন 34 তখন রাজা তাঁর ডানদিকের লোকদেরকে বলবেন এস আমার পিতার আশীর্বাদ ধন্য পাত্রেরা জগত সৃষ্টির প্রথম থেকে যে রাজ্য তোমাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে তার অধিকারী হও 35 কারণ যখন আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম তখন তোমরা আমাকে খাবার দিয়েছিলে আর যখন আমি পিপাসিত ছিলাম তখন আমাকে পান করিয়েছিলে অতিথি হয়েছিলাম আর আমাকে থাকার আশ্রয় দিয়েছিলে 36 বস্ত্রহীন হয়েছিলাম আর আমাকে বস্ত্র পরিয়েছিলে অসুস্থ হয়েছিলাম আর আমার যত্ন নিয়েছিলে জেলখানায় বন্দী ছিলাম আর আমার কাছে এসেছিলে 37 তখন ধার্মিকেরা তাঁকে বলবে প্রভু কবে আপনাকে ক্ষুধার্ত দেখে খেতে দিয়েছিলাম কিম্বা পিপাসিত দেখে পান করিয়েছিলাম 38 কবেই বা আপনাকে অতিথিরূপে আশ্রয় দিয়েছিলাম কিম্বা বস্ত্রহীন দেখে বস্ত্র পরিয়েছিলাম 39 কবেই বা আপনাকে অসুস্থ কিম্বা জেলখানায় আপনাকে দেখে আপনার কাছে গিয়েছিলাম 40 তখন রাজা এর উত্তরে তাদের বলবেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি আমার এই ভাইদের এই ক্ষুদ্রতমদের মধ্যে এক জনের প্রতি যখন এই সব করেছিলে তখন আমারই প্রতি করেছিলে 41 পরে তিনি বাঁদিকের লোকদেরকেও বলবেন তোমরা শাপগ্রস্ত সবাই আমার কাছ থেকে দূর হও দিয়াবলের ও তার দূতদের জন্য যে অনন্ত আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও 42 কারণ আমি ক্ষুধার্ত হয়েছিলাম আর তোমরা আমাকে খাবার দাও নি পিপাসিত হয়েছিলাম আর আমাকে পান করাও নি 43 অতিথি হয়েছিলাম আর আমাকে আশ্রয় দাও নি বস্ত্রহীন ছিলাম আর আমাকে বস্ত্র পরাও নি অসুস্থ ও জেলখানায় ছিলাম আর আমার যত্ন কর নি 44 তখন তারাও এর উত্তরে বলবে প্রভু কবে আপনাকে ক্ষুধার্ত কি পিপাসিত কি অতিথি কি বস্ত্রহীন কি অসুস্থ কি জেলখানায় দেখে আপনার সেবা করিনি 45 তখন তিনি তাদের বলবেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি তোমরা এই ক্ষুদ্রতমদের কোন এক জনের প্রতি যখন এই সব কর নি তখন আমারই প্রতি কর নি 46 পরে তারা অনন্তকালের জন্য শাস্তি পেতে কিন্তু ধার্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করবে
Chapter 26
যীশুর শেষ দুঃখভোগ ও মৃত্যু।
1 তখন যীশু এই সমস্ত কথা শেষ করলেন এবং তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন 2 তোমরা জান দুই দিন পরে নিস্তারপর্ব্ব আসছে আর মানবপুত্র ক্রুশে বিদ্ধ হবার জন্য সমর্পিত হবেন 3 তখন প্রধান যাজকেরা ও লোকদের প্রাচীনেরা কায়াফা মহাযাজকের বাড়ির প্রাঙ্গণে একত্র হল 4 আর এই ষড়যন্ত্র করল যেন ছলে যীশুকে ধরে বধ করতে পারে 5 কিন্তু তারা বলল পর্বের সময় নয় যদি লোকদের মধ্যে গন্ডগোল বাধে 6 যীশু তখন বৈথনিয়ায় শিমোনের বাড়িতে ছিলেন যে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল 7 তখন একটি মহিলা শ্বেত পাথরের পাত্রে খুব মূল্যবান সুগন্ধি তেল নিয়ে তাঁর কাছে এলো এবং তিনি খেতে বসলে তাঁর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিল 8 কিন্তু এই সব দেখে শিষ্যেরা বিরক্ত হয়ে বললেন এ অপচয়ের কারণ কি 9 এই তেল অনেক টাকায় বিক্রি করে তা দরিদ্রদেরকে দেওয়া যেত 10 কিন্তু যীশু এই সব বুঝতে পেরে তাঁদের বললেন এই মহিলাটিকে কেন দুঃখ দিচ্ছ এ তো আমার জন্য ভালো কাজ করল 11 কারণ দরিদ্ররা তোমাদের কাছে সব সময়ই আছে কিন্তু তোমরা আমাকে সবসময় পাবে না 12 তাই আমার দেহের উপরে এই সুগন্ধি তেল ঢেলে দেওয়াতে এ আমার সমাধির উপযোগী কাজ করল 13 আমি তোমাদের সত্যি বলছি সমস্ত জগতে যে কোন জায়গায় এই সুসমাচার প্রচারিত হবে সেই জায়গায় এর এই কাজের কথাও একে মনে রাখার জন্য বলা হবে 14 তখন বারো জনের মধ্যে একজন যাকে ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা বলা হয় সে প্রধান যাজকদের কাছে গিয়ে বলল 15 আমাকে কি দিতে চান বলুন আমি তাঁকে আপনাদের হাতে সমর্পণ করব তারা তাকে ত্রিশটা রূপার মুদ্রা গুনে দিল 16 আর সেই সময় থেকে সে তাঁকে ধরিয়ে দাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল 17 পরে তাড়ীশূন্য খামির বিহীন রুটি র পর্বের প্রথম দিন শিষ্যেরা যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করব আপনার ইচ্ছা কি 18 তিনি বললেন তোমরা শহরের অমুক ব্যক্তির কাছে যাও আর তাকে বল গুরু বলছেন আমার সময় সন্নিকট আমি তোমারই বাড়িতে আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্ব্ব পালন করব 19 তাতে শিষ্যেরা যীশুর আদেশ মতো কাজ করলেন ও নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন 20 পরে সন্ধ্যা হলে তিনি সেই বারো জন শিষ্যের সঙ্গে খেতে বসলেন 21 আর তাঁদের খাওয়ার সময়ে বললেন আমি তোমাদের সত্যি বলছি তোমাদের মধ্যে একজন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে 22 তখন তাঁরা অত্যন্ত দুঃখিত হলো এবং প্রত্যেক জন তাঁকে বলতে লাগলেন প্রভু সে কি আমি 23 তিনি বললেন যে আমার সঙ্গে খাবারপাত্রে হাত ডুবাল সেই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে 24 মানবপুত্রের বিষয়ে যেমন লেখা আছে তেমনি তিনি যাবেন কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে যার মাধ্যমে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেওয়া হবে সেই মানুষের জন্ম না হলেই তার পক্ষে ভাল ছিল 25 তখন যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে সেই যিহূদা বলল গুরু সে কি আমি তিনি বললেন তুমিই বললে 26 পরে তাঁরা খাবার খাচ্ছেন এমন সময়ে যীশু রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙলেন এবং শিষ্যদের দিলেন আর বললেন নাও খাও এটা আমার শরীর 27 পরে তিনি পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের দিয়ে বললেন তোমরা সবাই এর থেকে পান কর 28 কারণ এটা আমার রক্ত নতুন নিয়মের রক্ত যা অনেকের জন্য পাপ ক্ষমার জন্য ঝরবে 29 আর আমি তোমাদের বলছি এখন থেকে সেই দিন পর্যন্ত আমি এই আঙুরের রস পান করব না যত দিন না আমি আমার পিতার রাজ্যে প্রবেশ করি ও তোমাদের সাথে নতুন আঙুরের রস পান করি 30 পরে তাঁরা প্রশংসা গান করতে করতে জৈতুন পর্বতে গেলেন 31 তখন যীশু তাঁদের বললেন এই রাতে তোমরা সবাই আমাতে বাধা পাবে অর্থাৎ তোমরা আমাকে ত্যাগ করবে কারণ লেখা আছে আমি মেষ পালককে আঘাত করব তাতে মেষেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে 32 কিন্তু আমি মৃত্যু থেকে জীবিত হবার পরে আমি তোমাদের আগে গালীলে যাব 33 পিতর তাঁকে বললেন যদি সবাই আপনাকে ছেড়েও চলে যায় আমি কখনও ছাড়বনা 34 যীশু তাঁকে বললেন আমি তোমাকে সত্যি বলছি এই রাতে মোরগ ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে 35 পিতর তাঁকে বললেন যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয় তবু কোন মতেই আপনাকে অস্বীকার করব না সেই রকম সব শিষ্যই বললেন 36 তখন যীশু তাঁদের সঙ্গে গেৎশিমানী নামে এক জায়গায় গেলেন আর তাঁর শিষ্যদের বললেন আমি যতক্ষণ ওখানে গিয়ে প্রার্থনা করি ততক্ষণ তোমরা এখানে বসে থাক 37 পরে তিনি পিতরকে ও সিবদিয়ের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন আর দুঃখার্ত্ত ও ব্যাকুল হতে লাগলেন 38 তখন তিনি তাঁদের বললেন আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত্ত হয়েছে তোমরা এখানে থাক আমার সঙ্গে জেগে থাক 39 পরে তিনি একটু আগে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে প্রার্থনা করে বললেন হে আমার পিতা যদি এটা সম্ভব হয় তবে এই দুঃখের পানপাত্র আমার কাছে থেকে দূরে যাক আমার ইচ্ছামত না হোক কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হোক 40 পরে তিনি সেই শিষ্যদের কাছে গিয়ে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন আর তিনি পিতরকে বললেন একি এক ঘন্টাও কি আমার সঙ্গে জেগে থাকতে তোমাদের শক্তি হল না 41 জেগে থাক ও প্রার্থনা কর যেন পরীক্ষায় না পড় আত্মা ইচ্ছুক কিন্তু শরীর দুর্বল 42 আবার তিনি দ্বিতীয়বার গিয়ে এই প্রার্থনা করলেন হে আমার পিতা আমি পান না করলে যদি এই দুঃখকা পানপাত্র দূরে যেতে না পারে তবে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক 43 পরে তিনি আবার এসে দেখলেন তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে পড়েছিল 44 আর তিনি আবার তাঁদের ছেড়ে তৃতীয় বার আগের মতো কথা বলে প্রার্থনা করলেন 45 তখন তিনি শিষ্যদের কাছে এসে বললেন এখনও কি তোমরা ঘুমাচ্ছ এবং বিশ্রাম করছ দেখ সময় উপস্থিত মানবপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে 46 উঠ আমরা যাই এই দেখ যে ব্যক্তি আমাকে সমর্পণ করবে সে কাছে এসেছে 47 তিনি যখন কথা বলছিলেন দেখ যিহূদা সেই বারো জনের একজন এল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে প্রধান যাজকদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে এলো 48 যে তাঁকে সমর্পণ করছিল সে তাদের এই সংকেত বলেছিল আমি যাকে চুমু দেব তিনিই সেই ব্যক্তি তোমরা তাকে ধরবে 49 সে তখনই যীশুর কাছে গিয়ে বলল গুরু নমস্কার আর সে তাঁকে চুমু দিল 50 যীশু তাকে বললেন বন্ধু যা করতে এসেছ তা কর তখন তারা কাছে এসে যীশুর উপরে হস্তক্ষেপ করল ও তাঁকে ধরল 51 আর দেখ যীশুর সঙ্গীদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তরোয়াল বার করলেন এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন 52 তখন যীশু তাঁকে বললেন তোমার তরোয়াল যেখানে ছিল সেখানে রাখ কারণ যারা তরোয়াল ব্যবহার করে তারা তরোয়াল দিয়েই ধ্বংস হবে 53 আর তুমি কি মনে কর যে যদি আমি আমার পিতার কাছে অনুরোধ করি তবে তিনি কি এখনই আমার জন্য বারোটা বাহিনীর থেকেও বেশি দূত পাঠিয়ে দেবেন না 54 কিন্তু তা করলে কেমন করে শাস্ত্রের এই বাণীগুলি পূর্ণ হবে যে এমন অবশ্যই হবে 55 সেই সময়ে যীশু লোকদেরকে বললেন লোকে যেমন দস্যু ধরতে যায় তেমনি কি তোমরা তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছো আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের মন্দিরে বসে উপদেশ দিয়েছি তখন তো আমাকে ধরলে না 56 কিন্তু এ সমস্ত ঘটল যেন ভাববাদীদের লেখা ভাববাণীগুলি পূর্ণ হয় তখন শিষ্যেরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন 57 আর যারা যীশুকে ধরেছিল তারা তাঁকে মহাযাজক কায়াফার কাছে নিয়ে গেল সেই জায়গায় ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও প্রাচীনেরা সমবেত হয়েছিল 58 আর পিতর দূরে থেকে তাঁর পিছনে পিছনে মহাযাজকের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত গেলেন এবং শেষে কি হয় তা দেখার জন্য ভিতরে গিয়ে পাহারাদারদের সঙ্গে বসলেন 59 তখন প্রধান যাজকরা এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণ খুঁজতে লাগল 60 কিন্তু অনেক মিথ্যাসাক্ষী এসে যুটলেও তারা কিছুই পেল না 61 অবশেষে দুই জন এসে বলল এই ব্যক্তি বলেছিল আমি ঈশ্বরের মন্দির ভেঙে তা আবার তিন দিনের মধ্যে গেঁথে তুলতে পারি 62 তখন মহাযাজক উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে বললেন তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না তোমার বিরুদ্ধে এরা কিসব বলছে 63 কিন্তু যীশু চুপ করে থাকলেন মহাযাজক তাঁকে বললেন আমি তোমাকে জীবন্ত ঈশ্বরের নামে দিব্যি করছি আমাদেরকে বল দেখি তুমি কি সেই খ্রীষ্ট ঈশ্বরের পুত্র 64 যীশু এর উত্তরে বললেন তুমি নিজেই বললে আর আমি তোমাদের বলছি এখন থেকে তোমরা মানবপুত্রকে পরাক্রমের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডান পাশে বসে থাকতে এবং আকাশের মেঘরথে আসতে দেখবে 65 তখন মহাযাজক তাঁর বস্ত্র ছিঁড়ে বললেন এ ঈশ্বরনিন্দা করল আর প্রমাণে আমাদের কি প্রয়োজন দেখ এখন তোমরা ঈশ্বরনিন্দা শুনলে 66 তোমরা কি মনে কর তারা বলল এ মৃত্যুর যোগ্য 67 তখন তারা তাঁর মুখে থুথু দিল ও তাঁকে ঘুষি মারল 68 আর কেউ কেউ তাঁকে আঘাত করে বলল রে খ্রীষ্ট আমাদের কাছে ভাববাণী বল কে তোকে মারল 69 এদিকে পিতর যখন বাইরে উঠোনে বসেছিলেন তখন আর একজন দাসী তাঁর কাছে এসে বলল তুমিও সেই গালীলীয় যীশুর সঙ্গে ছিলে 70 কিন্তু তিনি সবার সামনে অস্বীকার করে বললেন তুমি কি বলছ আমি বুঝতে পারছি না 71 তিনি দরজার কাছে গেলে আর এক দাসী তাঁকে দেখতে পেয়ে লোকদেরকে বলল এ ব্যক্তি সেই নাসরতীয় যীশুর সঙ্গে ছিল 72 তিনি আবার অস্বীকার করলেন দিব্যি করে বললেন আমি সে ব্যক্তিকে চিনি না 73 আরও কিছুক্ষণ পরে যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল তারা এসে পিতরকে বলল সত্যিই তুমিও তাদের একজন কারণ তোমার ভাষাই তোমার পরিচয় দিচ্ছে 74 তখন তিনি অভিশাপের সঙ্গে শপথ করে বলতে লাগলেন আমি সেই ব্যক্তিকে চিনি না তখনই মোরগ ডেকে উঠল 75 তাতে যীশু এই যে কথা বলেছিলেন মোরগ ডাকার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে তা পিতরের মনে পড়ল এবং তিনি বাইরে গিয়ে অত্যন্ত করুন ভাবে কাঁদলেন
Chapter 27
1 সকাল হলে প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা সবাই যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল 2 আর তাঁকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে দেশাধ্যক্ষ পীলাতের কাছে সমর্পণ করল 3 তখন যিহূদা যে তাঁকে সমর্পণ করেছিল সে যখন বুঝতে পারল যে যীশুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তখন অনুশোচনা করে সেই ত্রিশটা রূপার মুদ্রা প্রধান যাজক ও প্রাচীনদের কাছে ফিরিয়ে দিল 4 আর বলল আমি নির্দোষ ব্যক্তির রক্তমাংসের বিরুদ্ধে পাপ করেছি তারা বলল আমাদের কি তা তুমি বুঝবে 5 তখন সে ঐ সমস্ত মুদ্রা মন্দিরের মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেল এবং গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করল 6 পরে প্রধান যাজকেরা সেই টাকাগুলো নিয়ে বলল এই টাকা ভান্ডারে রাখা উচিত না কারণ এটা রক্তের মূল্য 7 পরে তারা পরামর্শ করে বিদেশীদের কবর দাও য়ার জন্য ঐ টাকায় কুমরের জমি কিনল 8 এই জন্য আজও সেই জমিকে রক্তের জমি বলা হয় 9 তখন যিরমিয় ভাববাদী যে ভাববাণী বলেছিলেন তা পূর্ণ হল আর তারা সেই ত্রিশটা রূপার টাকা নিল এটা তাঁর যীশুর মূল্য যাঁর মূল্য ঠিক করা হয়েছিল এবং ইস্রায়েলসন্তানদের মধ্য কিছু লোক যাঁর মূল্য ঠিক করেছিল 10 তারা সেগুলি নিয়ে কুমরের জমির জন্য দিল যেমন প্রভু আমার প্রতি আদেশ করেছিলেন 11 ইতিমধ্যে যীশুকে শাসনকর্তার কাছে দাঁড় কারণ হল শাসনকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি ইহূদিদের রাজা যীশু তাঁকে বললেন তুমিই বললে 12 কিন্তু প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা তাঁর উপরে মিথ্যা দোষ দিতে লাগল তিনি সে বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করলেন না 13 তখন পীলাত তাঁকে বললেন তুমি কি শুনছ না ওরা তোমার বিরুদ্ধে কত বিষয়ে সাক্ষ দিচ্ছে 14 তিনি তাঁকে একটি কথারও উত্তর দিলেন না তাই দেখে শাসনকর্তা খুবই আশ্চর্য্য হলেন 15 আর শাসনকর্তার এই রীতি ছিল পর্বের সময়ে তিনি লোকদের জন্য এমন একজন বন্দিকে মুক্ত করতেন যাকে লোকেরা নির্বাচন করত 16 সেই সময়ে তাদের একজন কুখ্যাত বন্দী ছিল, তার নাম বারাব্বা। 17 তাই তারা একত্র হলে পীলাত তাদের বললেন, "তোমাদের ইচ্ছা কি, আমি তোমাদের জন্য কাকে মুক্ত করব? বারাব্বাকে, না যীশুকে, যাকে খ্রীষ্ট বলে?" 18 কারণ তিনি জানতেন, তারা হিংসার জন্যই তাঁকে সমর্পণ করেছিল। 19 তিনি বিচারাসনে বসে আছেন, এমন সময়ে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বলে পাঠালেন, "সেই ধার্মিকের প্রতি তুমি কিছুই কোর না, কারণ আমি আজ স্বপ্নে তাঁর জন্য অনেক দুঃখ পেয়েছি।" 20 আর প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনেরা লোকদেরকে বোঝাতে লাগল, যেন তারা বারাব্বাকে নির্বাচন করে ও যীশুকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। 21 তখন শাসনকর্তা তাদের বললেন, "তোমাদের ইচ্ছা কি? সেই দুইজনের মধ্যে কাকে মুক্ত করব?" তারা বলল, "বারাব্বাকে।" 22 পীলাত তাদের বললেন, "তবে যীশু, যাকে খ্রীষ্ট বলে, তাকে কি করব?" তারা সবাই বলল, "ওকে ক্রুশে দাও" 23 তিনি বললেন, "কেন? সে কি অপরাধ করেছে?" কিন্তু তারা আরও চেঁচিয়ে বলল, "ওকে ক্রুশে দাও।" 24 পীলাত যখন দেখলেন যে, তাঁর চেষ্টা বিফল, বরং আরও গন্ডগোল বাড়ছে, তখন জল নিয়ে লোকদের সামনে হাত ধুয়ে বললেন, "এই ধার্মিক ব্যক্তির রক্তপাতের সম্বন্ধে আমি নির্দোষ, তোমরাই তা বুঝবে।" 25 তাতে সমস্ত লোক এর উত্তরে বলল, "ওর রক্তের জন্য আমারা ও আমাদের সন্তানেরা দায়ী থাকব।" 26 তখন তিনি তাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে কোড়া (চাবুক) মেরে ক্রুশে দেবার জন্য জনসাধারণের হাতে সমর্পণ করলেন।
যীশুর প্রতি সৈন্যদের উপহাস।
27 তখন শাসনকর্তার সেনারা যীশুকে রাজবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে সমস্ত সেনাদের একত্র করল। 28 আর তারা তাঁর বস্ত্র খুলে নিয়ে তাঁকে একটি লাল পোশাক পরিয়ে দিল। 29 আর কাঁটার মুকুট গেঁথে তাঁর মাথায় সেটা পরিয়ে দিল ও তাঁর হাতে একটি লাঠি দিল, পরে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বসে, তাঁকে ঠাট্টা করে বলল, "ইহূদি রাজ, নমস্কার!" 30 আর তারা তাঁর গায়ে থুথু দিল ও সেই লাঠি নিয়ে, তাঁর মাথায় আঘাত করতে থাকলো। 31 আর তাঁকে ঠাট্টা করার পর পোশাকটি খুলে নিল ও তারা আবার তাঁকে তাঁর নিজের পোশাক পরিয়ে দিল এবং তাঁকে ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল।
যীশুর ক্রুশারোপণ ও মৃত্যু।
32 আর যখন তারা বাইরে এলো, তারা শিমোন নামে একজন কুরীনীয় লোকের দেখা পেল, তারা তাকেই, তাঁর ক্রুশ বহন করার জন্য বাধ্য করল। 33 পরে গলগথা নামে এক জায়গায়, অর্থাৎ যাকে 'মাথার খুলি' বলা হয়, 34 সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা তাঁকে পিত্তমিশ্রিত তেতো আঙ্গুরের রস পান করতে দিল, তিনি তা একটু পান করেই আর পান করতে চাইলেন না। 35 পরে তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে, গুটি চেলে ভাগ করে নিল, 36 আর সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগল। 37 আর তারা তাঁর মাথার উপরে তাঁর বিরুদ্ধে এই দোষের কথা লিখে লাগিয়ে দিল, ‘এ ব্যক্তি যীশু, ইহূদিদের রাজা।’ 38 তখন দুই জন দস্যুকেও তাঁর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল, একজন ডান পাশে আর একজন বাঁপাশে। 39 তখন যারা সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছিল, তারা মাথা নেড়ে নেড়ে খ্রীষ্টকে নিন্দা করে বলল, 40 "এই যে, তুমি না মন্দির ভেঙে ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে তা গাঁথবে! নিজেকে রক্ষা কর, যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, ক্রুশ থেকে নেমে এস।" 41 আর একইভাবে প্রধান যাজকেরা, ব্যবস্থার শিক্ষকেরা ও প্রাচীনেরা একসঙ্গে ঠাট্টা করে বলল, 42 "ঐ ব্যক্তি অন্য অন্য লোককে রক্ষা করত, আর নিজেকে রক্ষা করতে পারে না ও তো ইস্রায়েলের রাজা! এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা ওর উপরে বিশ্বাস করব, 43 ও ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখে, এখন তিনি ওকে বাঁচান, যদি ওকে রক্ষা করতে চান, কারণ ও তো বলেছে, আমি ঈশ্বরের পুত্র।" 44 আর যে দুই জন দস্যু তাঁর সঙ্গে ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল, তারাও তেমন ভাবে তাঁকে ঠাট্টা করল।
যীশুর মৃত্যু।
45 পরে বেলা বারোটা থেকে বিকাল তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকার হয়ে থাকল। 46 আর বিকাল তিনটের সময় যীশু উঁচুস্বরে চীৎকার করে বললেন, "এলী এলী লামা শবক্তানী, অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ?" 47 তাতে যারা সেখানে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই কথা শুনে বলল, "এ ব্যক্তি এলিয়কে ডাকছে।" 48 আর তাদের একজন অমনি দৌড়ে গেল, একটি স্পঞ্জ নিয়ে সিরকায় ডুবিয়ে নিয়ে এলো এবং একটা লাঠিতে লাগিয়ে তাঁকে পান করতে দিল। 49 কিন্তু অন্য সবাই বলল, "থাক, দেখি এলিয় ওকে রক্ষা করতে আসেন কি না।" 50 পরে যীশু আবার উঁচুস্বরে চীৎকার করে নিজের আত্মাকে সমর্পণ করলেন। 51 আর তখনি, মন্দিরের তিরস্করিনী (পর্দা) উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দুভাগ হল, ভূমিকম্প হল ও পাথরের চাঁই ফেটে গেল, 52 আর অনেক কবর খুলে গেল ও অনেক পবিত্র লোকের মৃতদেহ জীবিত হল, 53 আর তাঁর পুনরুত্থানের পর তাঁরা কবর থেকে বের হয়ে পবিত্র শহরে প্রবেশ করলেন, আর অনেক লোককে তাঁরা দেখা দিলেন। 54 শতপতি এবং যারা তাঁর সঙ্গে যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা ভূমিকম্প ও আর যা যা ঘটছিল, তা দেখে খুবই ভয় পেয়ে বলল, "সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।" 55 আর সেখানে অনেক মহিলারা ছিলেন, তাঁরা দূর থেকে দেখছিলেন, তাঁরা যীশুর সেবা করতে করতে গালীল থেকে তাঁকে অনুসরণ করে এখানে এসেছিলেন। 56 তাঁদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, যাকোবের ও যোষেফ মা মরিয়ম এবং সিবদিয়ের ছেলে যোহন ও যাকোবের মা ছিলেন।
যীশুর সমাধি।
57 পরে সন্ধ্যা হলে অরিমাথিয়ার একজন ধনী ব্যক্তি এলো, তাঁর নাম যোষেফ, তিনি নিজেও যীশুর শিষ্য হয়েছিলেন। 58 তিনি পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহ চাইলেন। তখন পীলাত তাঁকে তা নিয়ে যেতে আদেশ দিলেন। 59 তাতে যোষেফ মৃতদেহটি নিয়ে পরিষ্কার কমল কাপড়ে জড়ালেন, 60 এবং তাঁর নতুন কবরে রাখলেন, যেই কবর তিনি পাহাড় কেটে বানিয়ে ছিলেন, আর সেই কবরের মুখে একটি বড় পাথর গড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন। 61 মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম সেখানে ছিলেন, তাঁরা কবরের সামনে বসে থাকলেন।
কবর পাহারা।
62 পরের দিন, অর্থাৎ আয়োজন-দিনের পরের দিন, প্রধান যাজকেরা ও ফরীশীরা পীলাতের কাছে একত্র হয়ে বলল, 63 "আমাদের মনে আছে, সেই প্রতারক জীবিত থাকতে বলেছিল, তিন দিনের পরে আমি জীবিত হয়ে উঠব। 64 অতএব তিনদিন পর্যন্ত তার কবর পাহারা দিতে আদেশ করুন, না হলে তার শিষ্যেরা এসে তাকে চুরি করে নিয়ে যাবে, আর লোকদেরকে বলবে, তিনি মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়েছেন, তাহলে প্রথম ছলনার থেকে শেষ ছলনায় আরও ক্ষতি হবে।" 65 পীলাত তাদের বললেন, "আমার পাহারাদারদের নিয়ে যাও এবং তোমরা গিয়ে তা তোমাদের সাধ্যমত রক্ষা কর।" 66 তাতে তারা গিয়ে পাহারাদারদের সঙ্গে সেই পাথরে মুদ্রাঙ্ক দিয়ে কবর রক্ষা করতে লাগল।
Chapter 28
কবর থেকে যীশু জীবিত হন ও শিষ্যদের প্রতি তাঁর শেষ আদেশ।
1 বিশ্রামবার শেষ হয়ে এলো, সপ্তাহের প্রথম দিনের সূর্য্য উদয়ের সময়, মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম কবর দেখতে এলো। 2 আর দেখ, সেখানে মহা ভূমিকম্প হল, কারণ প্রভুর এক দূত স্বর্গ থেকে নেমে এসে সেই পাথরটা সরিয়ে দিলেন এবং তার উপরে বসলেন। 3 তাঁকে দেখতে বিদ্যুতের মতো এবং তাঁর পোশাক তুষারের মতো সাদা। 4 তাঁর ভয়ে পাহারাদাররা কাঁপতে লাগল ও আধমরা হয়ে পড়ল। 5 সেই দূত সেই মহিলাদের বললেন, "তোমরা ভয় পেয়ো না, কারণ আমি জানি যে, তোমরা ক্রুশে হত যীশুর খোঁজ করছ। 6 তিনি এখানে নেই, কারণ তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন, যেমন তিনি বলেছিলেন, এস, প্রভু যেখানে শুয়েছিলেন, সেই জায়গা দেখ। 7 আর তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বল যে, তিনি মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন আর বললেন, তোমাদের আগে গালীলে যাচ্ছেন, সেখানে তাঁকে দেখতে পাবে, দেখ, আমি তোমাদের বললাম।" 8 তখন তাঁরা সভয়ে ও মহা আনন্দে কবর থেকে ফিরে গিয়ে তাঁর শিষ্যদের তাড়াতাড়ি সংবাদ দাও য়ার জন্য দৌড়ে গেলেন। 9 আর দেখ, যীশু তাঁদের সামনে এলো, বললেন, "তোমাদের মঙ্গল হোক," তখন তাঁরা কাছে এসে তাঁর পা ধরলেন ও তাঁকে প্রণাম করলেন। 10 তখন যীশু তাঁদের বললেন, "ভয় কোর না, তোমরা যাও, আমার ভাইদের সংবাদ দাও, যেন তারা গালীলে যায়, সেখানে তারা আমাকে দেখতে পাবে।"
প্রহরীর বিবৃতি।
11 সেই মহিলারা যখন যাচ্ছিলেন, সেসময় পাহারাদারদের কেউ কেউ শহরে গিয়ে যা যা ঘটেছিল, সে সমস্ত ঘটনা প্রধান যাজকদের জানাল। 12 তখন তারা প্রাচীনদের সঙ্গে একজোট হয়ে পরামর্শ করল এবং ঐ সেনাদেরকে অনেক টাকা দিল, 13 আর বলল, "তোমরা বলবে যে, তাঁর শিষ্যরা রাতে এসে, যখন আমরা ঘুমিয়েছিলাম, তখন তাঁকে চুরি করে নিয়েগেছে।" 14 আর যদি এই কথা শাসনকর্তার কানে যায়, তখন আমরাই তাঁকে বুঝিয়ে তোমাদের ভাবনা দূর করব। 15 তখন তারা সেই টাকা নিল এবং তাদের যেমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তারা সেই রকম কাজ করল। আর যিহুদীদের মধ্যে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ল, যা আজও তাদের মধ্যে প্রচলিত আছে।
মহান আজ্ঞা।
16 পরে এগারো জন শিষ্য গালীলে যীশুর আদেশ অনুযায়ী সেই পর্বতে গেলেন, 17 আর তাঁরা তাঁকে দেখতে পেয়ে প্রণাম করলেন, কিন্তু কেউ কেউ সন্দেহ করলেন। 18 তখন যীশু কাছে এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন, "স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। 19 অতএব তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতিকে শিষ্য কর, পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও, 20 আমি তোমাদের যা যা আদেশ দিয়েছি, সে সমস্ত পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। আর দেখ, আমিই যুগের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।"