পৃথিবীতে জলপ্লাবন
সুদীর্ঘ সময় পর পৃথিবীতে আনেক লোক বাস করতে লাগল। তাদের আচরণ খুবই পাপী ও হিংসাত্নক বেড়ে গেল। তাদের আচরণ খুবই খারাপ হওয়াই ঈস্বর তাদেরকে এবং পৃথিবীকে এক প্রকান্ড জলপ্লাবনের মাধ্যমে ধ্বংস করতে সিদ্বান্ত নিলেন ।
নোহ ঈশ্বর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ লাভ করলেন।তিনি তার সমকালীন লোকদের মধ্যে এক ধার্মিক ও অনিন্দনীয় লোক ছিলেন । তাই প্রভূ নোহকে বললেন, আমি এক প্রকান্ড জলপ্লাবন সৃষ্টি করতে চলেছি। তাই তুমি কাঠ দিয়ে একটি বড় জাহাজ তৈরী করো।
ঈশ্বর নোহকে জাহাজটি তৈরী করতে বললেন, জাহাজটি প্রায় ১৪০ মিটার লম্বা, ২৩মিটার চওড়া ও ১৩.৫মিটার উচু হবে।নোহ জাহাজতি কাঠ দিয়ে তৈরী করলেন, এবং তিন স্তর বিশিষ্ট অনেক রুম,একটি ছাঁদ, এবং একটি জানালা তৈরী করলেন। জাহাজের ভিতরে নোহ,তার পরিবার এবং সকল প্রকার বন্য পশুপাখি বন্যা সময় নিরাপদে থাকতে পারে।
নোহ ঈশ্বরকে মান্য করতেন।তিনি এবং তার তিন ছেলেকে নিয়ে জাহাজ তৈরীর করলেন এবং সেটা তৈরীর জন্য অনেক বছর লাগলেন। কারণ জাহাজটা খুব বড় ছিল। নোহ লোকদেরকে সতর্ক দিয়ে জানিয়ে দিলেন এবং তাদেরকে প্রভুর পথে আসতে বললেন, কিন্তূ তারা কেউ বিশ্বাস করলেন না।
ঈশ্বর নোহকে আদেশ দিলেন, তুমি এবং তোমার পরিবার ও সকল প্রানিদের জন্য খাদ্য মজুত করো। সবকিছু প্রস্তুতি নেয়ার পর ঈশ্বর বললেন, এখনই সময় তুমি এবং তোমার পরিবারে ছেলে এবং পুত্রবধূ সবমিলে আটজন জাহাজে প্রবেশ করো।
ঈশ্বর সব ধরনের পশু ও পাখির মধ্যে থেকে মদ্দা ও মাদ্দী পশুপাখি নোহ কাছে পাঠালেন যাতে জাহাজে প্রবেশ করে বন্যার সময় নিরাপদে থাকতে পারে। ঈশ্বর সবধরনের পশু এবং পাখির মধ্যে সাত জোড়া করে মদ্দা ও মাদ্দী পাঠালেন যাতে হোম্বলি উৎসর্গ সময় ব্যবহার করতে পারে। যখন সকল লোক এবং পশুপাখি জাহাজের ভেতর প্রবেশ করলেন, তখন ঈশ্বর নিজেই দরজা বন্ধ্ব করে দিলেন।
তারপর বৃষ্টি, বৃষ্টি এবং বৃষ্টি শুরু হলো, চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত পৃথিবীতে বৃষ্টি অবিরামভাবে পড়তে থাকল, জল প্রবল বেগে পৃথিবীতে আসতে লাগল। জল পৃথিবীর সবকিছু এমনকি উঁচু উঁচু পাহাড় পর্বত পর্যন্ত ঢাকা পড়ে গেল।
শুকনো জমির উপর থাকা প্রত্যেকটি শ্বাসবিশিষ্ট প্রানী মারা গেল, শুধুমাত্র জাহা্রের ভেতরে যে লোক ও প্রাণীগুলো ছিল তারাই বাদ পড়ল।জাহাজটি জলের উপর ভেসে উঠল এবং জাহাজের ভেতরে রাখা সবকিছু জলমগ্ন থেকে রক্ষা পেল ।
বৃস্টি থামার পর জাহাজটি পাঁচ মাস ধরে জলের উপর ভাসমান ছিল এবং সে সময় জল সরার প্রক্রিয়া অব্যাহত রইল।তারপর একদিন জাহাজটি একটা পর্বতে চুড়ায় এসে স্থির হল ।কিন্তু তখনও সমস্ত স্থলভুমি জলে ঢাকা ছিল ।তিন মাস অধিক সময় হওয়ার পর পাহার পর্বতের চুড়াগুলি দৃষ্টিগোচর হল।
চল্লিশ দিন অধিক সময় পর নোহ একটি দাঁড়কাক বাইরে পাঠালেন, প্রথিবীতে জল শুকিয়েছে কিনা দেখার জন্য । দাঁড়কাক পাখিটি শুষ্ক স্থলভূমি খুজে দেখলেন,কিন্তু কোন কিছু না দেখে আবার ফিরে আসলেন।
পরে নোহ স্থলভুমি জল শুকিয়েছে কিনা দেখার জন্য তিনি একটি পায়রা বাইরে পাঠালেন। কিন্তু পায়রাটি তখন পর্যন্ত কনো শুকনো জায়গা খুজে পায়নি তাই সেটি জাহাজের নোহ কাছে ফিরে এলো সাতদিন অপেক্ষা পর আবার সেই পায়রাটিকে বাইরে পাথালেন এবং পায়রাটি একটি জলপাই গাছের শাখা নিয়ে ফিরে আসলেন! তখন নোহ জানতে পারলেন যে পৃথিবী থেকে জল সরে যাচ্ছে এবং চারাগাছ আবার গজিয়ে উঠেছে।
তিনি আরো সাতদিন অপেক্ষা করলেন এবং তৃতীয় বারের মতো আবার সেই পায়রাটিকে বাইরে পাঠালেন, এবার কিন্তু নিশ্চলতা জায়গা খুঁজে পেলেন এবং সেটি আর তার কাছে ফিরে এলো না। তখন পানি শুকিয়ে গেছে।
দুইমাস পর ঈশ্বর নোহকে বললেন, “তুমি এবং তোমার পরিবারে লোকজন এবং যেসব জীবিত প্রাণী তোমার সাথে আছে সবগুলোকে বাইরে বের করে আনো, যেন সেগুলি পৃথিবীতে বংশবৃব্ধি করে এখানে ফলবান হয় ও সংখ্যায় বৃব্ধি পায়”।তাই নোই এবং তাঁর পরিবারে লোকজন জাহাজ থেকে বেরিয়ে আসলেন।
পরে নোহ জাহাজ খালির করে একটি যজ্ঞবেদি তৈরী করলেন এবং সব শুচিশুব্ধ পশু ও পাখির মধ্যে থেকে কয়েকটি নিলেন,এবং ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সেই বেদিতে হোমবলির উৎসর্গ করলেন। প্রভু সেই প্রীতিকর সৌরভের ঘ্রাণ নিয়ে সন্তুষ্ট হলেন এবং তিনি নোহ ও তাঁর পরিবারে লোকদেরকে আশীর্বাদ করলেন।
ঈশ্বর বললেন,আমি প্রতিজ্ঞা করছি মানুষের পাপের জন্য আমি আর কখনো ভুমিকে অভিশাপ দেব না, এবং চিন্তা করলেন যে, লোকজন এবং তাদের সন্তানসন্তুতি পাপ করলেও তাদেরকে বন্যার মাধ্যমে আর পৃথিবীকে ধ্বংস করব না ।
ঈশ্বর তখনই প্রতিজ্ঞা চিহ্ন হিসেবে প্রথমে মেঘধনু সৃষ্টি করলেন । যখন সেই মেঘধনু আকাশে আবির্ভুত হবে তখনই আমি তোমাদের সাথে স্থাপিত করার সেই নিয়ম স্মরণ করব ।
Genesis 6-8